শাহবাগের চক্রব্যূহ

 By Zia-ul Haque

 

ঔপনিবেশিক যামানায় বিশেষত উনিশ শতকে ভারতীয় পূরাণ বা হিন্দু ঐতিহ্যেকে সামনে রেখে মাইকেল মধুসূদন দত্ত রামায়ণের পুণর্পাঠ করলেন ; যা সেই বাস্তবতায় ধর্মতত্ত্বীয় মহিমার খর্বকরণ ও জাতীয়তাবাদী পাঠ হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। উপনিবেশি ভারতে আয়নায় উল্টো বিম্ব দেখবার মওকা দেরিতে হলেও, পশ্চিম তার বাস্তবতায় দান্তে হতে মিল্টন হয়ে পূর্বেই অবলোকন করেছিল বৈকি! মাইকেলের উছিলায় রামায়ণের স্থলে মহাভারতকে সামনে রেখে, শাহবাগ আন্দোলনের সাপেক্ষে রাজনৈতিক পাঠ - পর্যালোচনা হাজিরের কোশেশ হিসাবে উক্ত নিবন্ধের অবতারণা। মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরব সেনাপতি দ্রোনাচার্যের তৈরি করা সামরিক চক্রব্যূহে (चक्रव्यूह), অর্জুন-সুভদ্রা নন্দন অভিমূন্য খুনের সাথে শাহবাগে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক নেতৃত্ব এর বৈচারিক খুনের মিতালির সুলুকসন্ধান করে ; উক্ত খুন পরবর্তী লাশের পরিচয় বিকৃতকরণ বা লাশ গুমের লাশতান্ত্রিক - মতাদর্শিক রাজনীতির তদন্ত করা উক্ত নিবন্ধের অন্যতম বাসনা।

১.  "যাহা নাই ভারতে, তাহা নাই মহাভারতে "

                       - প্রবাদ  

"ভারতে যা নেই, তা মহাভারতেও নেই " প্রবাদ খানা আক্ষরিকভাবে ত বটেই, অনেকাংশে মর্মগত ও প্রায়োগিক দিক বিবেচনায় চিন্তা উদ্দীপক শনাক্তি। এই বিবেচনার কুলুজির হদিস করে পাঠককে বিড়ম্বনায় ফেলে জুলুম করতে চাচ্ছি না৷ তাই ঠিক করলাম, সরাসরি উদাহরণেই যাওয়া যাক৷ মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের চক্রব্যুহে নিয়ম-বহির্ভূত অর্জুন পুত্র অভিমূন্যের খুনের সিলসিলা কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী ইসলামপন্থী নেতা আফজাল গুরু অবধি বিস্তৃত। ভারতের লাশ রাজনীতির সিলসিলা শনাক্ত করতে ৯ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ইসায়ী দিন ই কাফি! আফজাল গুরুকে ভারত রাষ্ট্র খুন করে দিল্লির জেলখানায়৷ পাশাপাশি সময়ে ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ঢাকার শাহবাগে ইসলামপন্থী নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার  বিচার-বহির্ভূত খুনের দাবিতে হাজির হয় রাম রাজত্বের বানর বাহিনী। রামায়ণে যেরকম বানর বাহিনী রামের হয়ে লঙ্কা আক্রমণ করে, লঙ্কার সার্বভৌমতত্ত্ব খামছে ধরে ; ঠিক একই কায়দায় শাহবাগের বানর বাহিনী রাম রাজত্বের মদদে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ত্ব খামচে ধরে৷

মহাভারতে কুরুক্ষেত্রে কৌরব সেনাপতি দ্রোণাচার্য চক্রব্যূহ তৈরি করেন। অর্জুনের অনুপস্থিতে অর্জুন পুত্র অভিমূন্য চাচা যুধিষ্ঠিরের অনুমতি নিয়ে চক্রব্যূহে প্রবেশের তাগিদে রথযাত্রা করে৷ যদিও অভিমূন্য চক্রব্যূহে প্রবেশের উপায় জানলেও, বের হবার তরিকা জানত না৷ চক্রব্যূহে একা বীরদর্পে কৌরব শিবিরের রথী-মহারথী যোদ্ধাদের সাথে লড়াই করে। দ্রোণাচার্য, কৃপাচার্য, দুর্যধন, দুঃশাসন, অশ্বত্থামা, গান্ধার-রাজ শকুনি, মহাবীর কর্ণের মতোন রথী-মহারথীদের অভিমূন্য একাই কাবু করেছিল৷ হঠাৎ অভিমূন্যের রথের চাকায় আক্রমণ করে তাকে রথ হতে মাটিতে ফেলে দেয়৷ অস্ত্র নিয়ে ময়দানে নেমে  আসে দুর্যধন, দুঃশাসন, অশ্বত্থামা, গান্ধার-রাজ শকুনি, মহাবীর কর্ণ সহ অনেক যোদ্ধা। কুল গুরু কৃপাচার্য ও ভারপ্রাপ্ত সেনাপতি দ্রোণাচার্য রথের উপরেই দাঁড়িয়ে থাকে৷ অভিমূণ্যেকে একে একে সকলে তলোয়ার দিয়ে শরীলকে লাশ বানানোর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে৷ যুদ্ধের নিয়ম ভেঙে সকলে একযোগে একজনের উপর আক্রমণ করে, তাকে খুন করে৷ রথে দাঁড়িয়ে এই চিত্র দেখে কৃপাচার্য ও দ্রোণাচার্য। শহিদ হবার আগ মুহূর্তে অভিমূন্য উক্ত যোদ্ধাদের কাপুরুষ কহেন৷ আফসোস করেন এই বলে যে, কাপুরুষের হাতে তাকে বীরগতি হতে হলো।

বাংলাদেশের আধিপত্যবাদী সেক্যুলার ডিস্কোর্সে শাহবাগ ও শাহবাগের সংশোধনবাদী প্রকল্পে আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসীর দাবি নানা মাত্রায় হাজিরা দেয়৷ শাহবাগে জড়ো হওয়া বানর বাহিনী হতে আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসীর মাধ্যমে বৈচারিক খুন করা, এবং উক্ত খুন হবার পরে শাহবাগের সংশোধনবাদী ধারা বিচারহীনতা আর মজলুম বর্গের উছিলায় আব্দুল কাদের মোল্লার লাশের পরিচয় দেদারসে গুম করে দেয়৷ তাহলে দেখা যাচ্ছে, সেক্যুলার ধারাতে শাহবাগ সংক্রান্ত যে ইখতিলাফ বা বাহাস বিদ্যমান তা মুলত মাজহাবি বা তরিকা নিয়ে। উসুলি-বুনিয়াদি বা বাসনাগত বাহাস নয়৷ বরং উসুলি-বুনিয়াদি বা বাসনাগত ঐক্য বিদ্যমান৷ বাসনাগত ঐক্য যদি না থাকে, তাহলে কেন শরীলকে লাশ বানানোর লাশতান্ত্রিক রাজনীতি ( Necropolitics) কে ধামাচাপা দিতে লাশের পরিচয় গুম বা লাশের চেহারা বিকৃতকরণ? 

২. কৌরবদের অহং, ঘৃনা, হিংসা ও তার লাশ রাজনীতির বাসনার সাথে বাঙালি জাতীয়তাবাদের রুপ ও বাসনা অভিন্ন। দুর্যধন যেমন কোন মীমাংসার পক্ষপাতী নয়, বরং তার বাসনায় পান্ডবদের শরীলে লাশতান্ত্রিক ক্ষমতা চর্চা ই মুখ্য। বনবাসে থাকাকালীন, শকুনি মামার কুচক্রে আগুনে পুড়িয়ে মারবার যে আয়োজন, তা বাংলাদেশের সেক্যুলারদের শাহবাগে ইসলামের রাজনৈতিকতা নির্মূলের আয়োজন হিসাবে চিহ্নিত করা যায়৷ কৌরবদের এই অহং, হিংসাও লাশ রাজনীতির পাশাপাশি, তাদের স্বপ্নের জগতে পান্ডবেরা ভয় তৈরি করে৷ পান্ডবেরা না থেকেও হাজির৷ পান্ডবদের অস্তিত্ব ই কৌরবদের যত যন্ত্রণার কারণ। উপনিবেশি যামানায় স্বপ্নের জগতের এই ভয় আমরা লক্ষ করি উপনিবেশিক শক্তির কর্তাদের। মার্কিন মুলকে এই ভয় দেখা যায় সাদাদের। কালোরা তাদের স্বপ্নের জগতে হাজিরা দেয়। কালোর অস্তিত্ব তার মাঝে ত্রাস তৈরি করে। ত্রাস ছড়িয়ে পড়ে। একই ভাবে, ভারতীয় ও ইসরাইলিদের স্বপ্নের জগতে এই ভয় হাজির করে  কাশ্মীরি ও হামাসের মুজাহিদীনরা৷ একই ভয়, বাংলাদেশের সেক্যুলার সমাজেও দেখা যায়৷ ইসলামপন্থা, এর রাজনৈতিকতা, তার ক্ষমতায়ন, তাদের রাজনৈতিক কর্তাসত্তা সেক্যুলারদের স্বপ্নের জগতে ভয় তৈরি করে৷ মার্কিন মুলুকে সাদারা, ভারতে কাশ্মীরি মুজাহিদ, ইসরাইলে হামাস, এবং বাংলাদেশে সেক্যুলারদের সাপেক্ষে  ইসলামপন্থীরা সত্তাতত্ত্বীয় দুশমণ ( Ontological Enemy)  হিসাবে চিহ্নিত হয়। শত্রু এর লাশ হবার নিশ্চিতি ই শুধু এই ভয়ের বিহিত করতে পারে৷ তাই শত্রু এর শরীলে লাশতান্ত্রিক ক্ষমতা চর্চার মাধ্যমে খুন করা ই সমীকরনের একমাত্র সমাধান হয়ে যায়৷ 

শাহবাগ নিজেকে গণ দাবি করে। শাহবাগে উচ্চারিত এই 'গণ '  'সার্বজনীন  ' ইত্যাদি বর্গগুলো যে হাওয়াই বিষয় তা বুঝতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না। এই গণ বা সার্বজনীনতার দাবির উৎস হিসাবে ইসলাম ও সেক্যুলারবাদের নতত্ত্ববিদ তানজিন রাশিদ দোহা ইন্ডিক থট ( Indic thought) কে চিহ্নিত করেন।  ইতিহাসযান প্রকাশিত উপ-সম্পাদকীয়তে দোহা ইসলামের সাথে ইন্ডিক থটের এন্টাগোনিস্টিক সম্পর্ক নির্ণয় করেন৷

"ইন্ডিক থটের সাথে মনোথিইজম particularly ইসলামের সাথে Conflict টা Essential এন্টাগোনিইজম।ইন্ডিক থটের ভিতর থেকে যে Universalism এর আর্বিভাব হয় তা essentially একটা ফ্যাসিস্ট Universalism."

তানজিন রাশিদ দোহা ভারত রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী সার্বজনীনবাদের পর্যালোচনা হাজিরে এটা ব্যবহার করলেও, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বুনিয়াদি দিক বিবেচনায় এটা কার্যকরী। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের যে ফ্যাসিবাদী সার্বজনীনবাদ তা  ইসলাম, ইসলামের রাজনৈতিকতা তথা ইসলামপন্থা, তার ক্ষমতায়ন, রাজনৈতিক কর্তাসত্ত্বা ও তার সার্বভৌমত্ত্বের প্রস্তাবনা ধারণ করতে পারে না৷ সত্তাতাত্ত্বিক দুশমণি করতে হয়। তানজিন দোহা ইন্ডিক থটের সার্বজনীনবাদের ভেতর-বাহিরের সরুপ তালাশ করে জানাচ্ছেন, ইন্ডিক থট অবয়বে খুবই ফ্লুইড ও ইনক্লুসিভ হিসাবে দেখা যায়। আদতে, মর্মের দিকে বিবেচনায় তা নয়৷ বরং এই ইনক্লুসিভ বা অন্তর্ভুক্তিমুলকতার চরিত্র ইসলামকে ডিজ - আর্টিকুলেট করে নেয়। দোহা এটাকে গ্রামশিয়ান লফযে War of Position বলে শনাক্ত করে। ইন্ডিক থটের এই অন্তর্ভুক্তিমুলকতার রাজনৈতিকতাকে বারি  "খোজাকরণের রাজনীতি " বলে চিহ্নিত করে৷

শাহবাগ ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বুনিয়াদি রোগের লক্ষণ। শাহবাগের তত্ত্বীয় ভিত দানকারী, অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এই অর্থে সত্য ই বলেছেন৷ অধ্যাপক, খান কহেন :

"শাহবাগে সমবেত প্রতিবাদ সমাবেশ হইতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের হৃদরোগ কোন জায়গায় তাহার আলামত স্পষ্ট। ১৯৪৭ সালে বিট্রিশ শাসিত ও বিট্রিশ প্রভাবিত ভারত ভাগ হইয়া ছিল ধর্মভিত্তিক সম্প্রদায় পরিচয়কে বড় করিয়া৷ আর ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ গঠন করা হইয়াছে সেই পরিচয়কে নাকচ করিয়া। " 

শাহবাগ উত্তর-কালে অনেক মহাজন বলেন, শাহবাগ শুধুই সাংস্কৃতিক বাইনারি, বিচারহীনতা, সরকারপ্রকল্প৷ এই মহাজনেরা যে অবয়বের অন্তরালে মর্মের হদিস করতে নাকামিয়াব, তার ই প্রমান এই বর্গীয়করণ৷ আবার, অনেক শাহবাগের কারিগর - বয়াতি - কুতুবেরা আত্ম সমালোচনা করার অভিনয়ে দাবি করে, শাহবাগ ত ছিল অনেক গুলো। সরকারের শাহবাগের সাথে তাদের শাহবাগের ফারাক তারা প্রচার করে। আরেক ধারা আছে শাহবাগের সংশোধনবাদী। এমত অবস্থায়, এই দাবি যদি সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠ হয়, তাও বাসনাগত ঐক্য ত নাই হয়ে যায় না৷ ইন্ডিপেন্ডেন্ট রিসার্চার তাহমিদাল জামি শাহবাগকে দুই ভাগে বর্গীয়করন করে৷ পয়লা বর্গ শাহবাগের শাহবাদ, দুসরা শাহবাগের গণ-শাহবাদ।

"শাহবাগের একটা বড় অংশই গণতান্ত্রিক নিত্য-জাগৃতির অবিরাম বেদনার ভার বইতে ইচ্ছুক ছিলেন ও আছেন। চিন্তৎপরতার নিরন্তর ভাংচুরের মধ্য দিয়ে তাঁরা বাংলাদেশে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রশ্নকে মোকাবেলা করতে চাইছেন। এইটা শাহবাগের উত্তরাধিকারের প্রধান বরকত হিসাবে আমরা লাভ করেছি। এইটাই এন্টিফ্যাসিস্ট গণশাহবাদ। গণের শাহির পতাকা। "

বিধান রিবেরু মতে, শাহবাগের গণ-শাহবাদ বেহাত হয়ে গেছে। এই বেহাত তত্ত্ব নতুন নয়৷ একাত্তরকে বিপ্লব বলে, ৭৫ পরবর্তী সময়কে বেহাত বিপ্লব বলা অধ্যাপক, খান এখানেও চটকদারির আশ্রয় নিচ্ছেন৷ এই চটকাদারিতে শামিল হয়েছে, তার সহযোদ্ধারা। জামি, রিবেরুর এই বেহাত তত্ত্ব চটকদারি বৈ কিছু নয়। বাসনাগত দিক বিবেচনায় এই বর্গীয়করণের উভয়েই যুদ্ধাপরাধের বিচারকে সামনে নিয়ে ইসলামপন্থা নির্মূলের মতাদর্শিক রাজনীতিতে লিপ্ত ছিল।  

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী সার্বজনীনবাদের প্রকাশ ঘটে দুই ভাবে৷ পয়লা ঘটে, বাঙালি জাতীয়তাবাদের লাশ রাজনীতির বাতাবরণে৷ দুসরা ঘটে, ইসলাম ও মুসলিমের সাংস্কৃতিক দিক অন্তর্ভুক্তির ছদ্মবেশে ; যা দোহা গ্রামশিয়ান টার্ম "ওয়ার অফ পজিশনে" ,বারি "খোজাকরণের রাজনীতি " তে বাক্স বন্দী করেছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী সার্বজনীনবাদ এর পয়লা প্রকাশ ঘটে, শাহবাগে৷ পয়লা প্রকাশের লক্ষণ : "বাঙালি জাতীয়তাবাদ", "৭২ এর সংবিধানে ফেরত", "আইনি বলে ও রাষ্ট্রের ক্ষমতা ব্যবহার করে ইসলামের রাজনৈতিকতা নির্মূল", "লাশতান্ত্রিক ক্ষমতার চর্চা "ইত্যাদি ইত্যাদি। দুসরা, প্রকাশ ঘটে শাহবাগের সংশোধনবাদী ধারা হতে। এই ধারার সেক্যুলাররা লাশতান্ত্রিক ক্ষমতার স্থলে ডিসিপ্লিনারি বা নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতা চর্চাতে আগ্রহী। দুসরা ধারার প্রকাশের লক্ষণ হলো : "সাম্য ", " মানবিক মর্যাদা ", "নাগরিক অধিকার " "ইসলামের সাংস্কৃতিক দিক " ইত্যাদি ইত্যাদি। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী সার্বজনীনবাদের উভয় প্রকাশের এক বিশেষ মিল৷ তা হলো ইসলামের রাজনৈতিকতা, তার ক্ষমতায়ন, তার রাজনৈতিক কর্তাসত্তা ঠেকানো। অর্থাৎ, বুনিয়াদি বাসনা অভিন্ন, তবে তরিকা ভিন্ন৷ এক পক্ষ নির্মূলের রাজনীতি করে, অপর পক্ষ নাগরিক বর্গের সাপেক্ষে  নির্মূলের রাজনীতির পর্যালোচনা করে নিয়ন্ত্রণের রাজনীতি প্রস্তাব করে।

৩. মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের চক্রব্যূহে দুর্যধন, শকুনি মামা, দুঃশশাসন, কর্ণ সহ কৌরব শিবির অভিমূন্যের অস্তিত্ব খুন করে যেমন নাই করে দেয়, তদ্রূপ দ্রোণাচার্য - কৃপাচার্যের নিরপেক্ষ তাকিয়ে দেখা সেই খুনের বৈধতা দেয়। দ্রোনাচার্য - কৃপাচার্য যেমন পান্ডবদের প্রতি পীরিত ( ফিলিয়া) দেখায়৷ তদ্রূপ নাগরিক অধিকারের জায়গা হতে শাহবাগকে গাল মন্দ করা সেক্যুলাররা ইসলাম, ইসলামের সাংস্কৃতিক দিক, ইসলামপন্থী জন-গোষ্ঠীর প্রতি ফিলিয়া দেখায়৷ দ্রোনাচার্য - কৃপাচার্যের চোখে যেমন অভিমূন্য শুধুই মজলুম৷ অভিমূন্য যে ন্যাক্রো পলিটিক্যাল অজেক্ট হল, তা মজলুম শব্দের ভিতর দিয়ে নাই হয়ে গেল। অভিমূন্যের লাশের পরিচয়, তার সত্তাকে যেরুপে নাই করে দেওয়া হয়, দ্রোণাচার্য ও কৃপাচার্যের মৃদ্যু পীরিতির উছিলায়৷ ঠিক একই তরিকায় সাম্য, মানবিক মর্যাদা, নাগরিক অধিকারের সাপেক্ষে শাহবাগের ক্রিটিক করা সেক্যুলার বা শাহবাগ ফেরত আত্ম-সমালোচক গণ কাদের মোল্লা সহ শাহবাগে খুন হওয়া ইসলামপন্থী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে মজলুম বর্গে ফেলে দেয়৷ মজলুম বর্গে ফেলে অভিমূন্য বা কাদের মোল্লার লাশের চেহারা বিকৃত করে। কারন এই হাজির লাশের যে আত্ম-পরিচয় আছে৷ অভিমূন্যের আত্ম-পরিচয় হলো সে পান্ডব, আর কাদের মোল্লার হলো মুসলিম, ইসলামপন্থী রাজনৈতিক নেতা৷  অভিমূন্য ও কাদের মোল্লার কর্তাসত্ত্বা (Subjectivity) , তাদের অস্তিত্ত্বের মর্মজিজ্ঞাষা (Ontology) , তাদের খাঁটি সত্তা ( Authentic Dasein) কে গুম করে দেয় সাম্য - মানবিক মর্যাদা - নাগরিক অধিকার - ইসলামোফিলিয়া দেখানো শাহবাগের চক্রব্যূহের সংশোধনবাদী দ্রোণাচার্য গণ।

শাহবাগ আন্দোলনকে যত-ই বাইনারি বলা হোক না কেন, এর পূর্ণ পর্যালোচনা ছাড়া বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মাফিয়া-লুটেরা - লাশতান্ত্রিক - ফ্যাসিবাদী কুয়াশা কাটবে না৷ উল্টো, পড়শি শকুনির চালে পান্ডবদের মতোন সর্বহারা হতে হবে। সার্বভৌমত্ত্ব কেড়ে নিবে, যেরুপ পান্ডু পুত্র যুধিষ্ঠিরের নিয়েছিল৷ শাহবাগকে বাইনারি বলে চোখ বন্ধ করে এড়িয়ে গেলে বনবাস - অজ্ঞাতবাসের চক্র হতে বের হবার মওকা হয়ে উঠবে না। হস্তিনাপুরের জলসাঘরে দেদারসে চলবে উত্তর ভারতীয় বাঈজীর নাচ, আর দিল্লি কা লাড্ডু।

 

দোহাই  

১. মহাভারত, কাশীরাম দাস কর্তৃক অনুদিত, অক্ষয় প্রেস, শ্রী পুর্ণচন্দ্র শীল কর্তৃক প্রকাশিত; ১৩৩২ সাল।

২. মহাভারত, রাজশেখর বসুর সারানুবাদ, এম. সি. সরকার এন্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ত্রয়োদশ মুদ্রণ- ১৪১৮

৩.https://www.milestonesjournal.net/shapla-10-year-anniversary-1/2024/1/15/-

4.https://www.milestonesjournal.net/shapla-10-year-anniversary-1/2023/5/4

৫.https://youtu.be/aD7vQTlUWYg?si=cYggg8RB-ltNaF33

৬. এখানে নৃতত্ত্ববিদ তানজীন রাশিদ দোহার রিসার্চ ও

আব্দুর রহমান বারির রিসার্চের বেশ কিছু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তানজীন রাশিদ দোহার ইসলামোফিলিয়া, ইন্ডিক থট ধারণা, বারির খোজাকরণের রাজনীতি ইত্যাদি ইত্যাদি ব্যবহার হয়েছে৷ ইতিহাসযানে হতে তানজীন রাশিদ দোহার এই সকল ধারণা নেওয়া হয়েছে। আহমদ সাব্বির সম্পাদিত, যোগাযোগ ঈদ সংখ্যা থেকে বারির ধারণা নেওয়া হয়েছে৷  

৭.তাহমিদাল জামির শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে ফেসবুক পোস্টের খন্ডাংশ।

" শাহবাগের একটা বড় অংশই গণতান্ত্রিক নিত্য-জাগৃতির অবিরাম বেদনার ভার বইতে ইচ্ছুক ছিলেন ও আছেন। চিন্তৎপরতার নিরন্তর ভাংচুরের মধ্য দিয়ে তাঁরা বাংলাদেশে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রশ্নকে মোকাবেলা করতে চাইছেন। এইটা শাহবাগের উত্তরাধিকারের প্রধান বরকত হিসাবে আমরা লাভ করেছি। এইটাই এন্টিফ্যাসিস্ট গণশাহবাদ। গণের শাহির পতাকা। "