ইসলামপন্থা ও মুজাদ্দিদে আলফে সানি আহমদ সিরহিন্দ

By Mufti Fazlul Haque Amini

 

হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ:) সম্রাট আকবরের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রকাশ্য যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন, তা ছিল রমযান মাসের ঘটনা। একবার ৩০ রমযান দরবারী আলেম আবুল ফযল হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য আসল। মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ:) রোযাদার ছিলেন। আবুল ফযল বলল, আপনি কি রোযা রেখেছেন? মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ:) বললেন, কেন, হ্যাঁ আমি তো রোযা রেখেছি। আবুল ফযল বললো, বাদশাহ তো রোযা ভাঙার হুকুম দিয়েছেন তিনি চাঁদ দেখেছেন। মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ:) এর জবাবে সাফ জানিয়ে দেন :

" বাদশাহ বেদ্বীন। তার কথার কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই। "

সম্রাট আকবরের বিরুদ্ধে এই প্রথম মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ:) প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। ইতিপূর্বে এত শক্ত ভাষায় কথা বলবার দুঃসাহস কেউ দেখাতে পারেনি৷ আকবরের শাসন ক্ষমতা থাকা কালেই মুজাদ্দিদে আলফেসানী দ্বীনে এলাহীর বিরুদ্ধে  হুংকার ছুড়েন। আর এর পুরো ফলাফল অর্জিত হয় সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে। হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ;) দ্বীনের সংস্কারে যে সাহসী ভূমিকা পালন করেন, তা বাস্তবায়নে তিনি কোন সংগঠন গড়ে তোলেননি৷ তার এই 'তাজদীদী' বিশাল কাজ সম্পাদিত হয়েছে একমাত্র "আধ্যাত্মিক" শক্তিবলে। সুতরাং সংগঠনের পূর্বে আমাদের আধ্যাত্মিক বলে বলীয়ান হতে হবে। আমরা সংগঠন করছি, করতে হবে, তাই বলে সংগঠনের মাধ্যমে আমরা সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হব, এমনটি বিশ্বাস করা আদৌ ঠিক নয়। সংগঠনের সঙ্গে সঙ্গে আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করতে পারলেই হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানীর মত আকবরী ফেতনার মূলোৎপাটন সম্ভব হবে। যেমনিভাবে তিনি আকবরী ফেতনার মূলোৎপাটন ঘটিয়ে পুরো হুকুমতের চেহারা পাল্টে ফেলতে পেরেছিলেন ; ঠিক এমন সাহসিকতা ও মনোবল এবং ঈমানী শক্তি নিয়ে বর্তমানেও এগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে যেতে হবে, তাহলে অবশ্যই আল্লাহর নুসরত ও মদদ শামেলে হাল হবে। আজকাল অনেক মোল্লা মৌলভীই উক্তি করে থাকে যে, মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ;) যেভাবে শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক রেখে দ্বীনের সংস্কার করেছেন, আমরাও তারই পথ অনুসরণ করে শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছি এবং আমরাও সরকারের ইসলাহর জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি বলব, তারা ইসলাহ নয় বরং সরকারের কাছে তারা বিক্রি হয়ে গেছে।

 কৃতজ্ঞতা : উক্ত লেখাটা মুফতি আমিনি রহ: এর বক্তৃতার খন্ডাংশ, যা তিনি ২০১০ সালে লালবাগ মাদ্রাসায় বাদ এশা আলোচনা করেছিলেন৷ উক্ত আলোচনা অনুলিখন করেন মাওলানা মুহাম্মদ তৈয়্যেব হোসাইন, যা পরবর্তী সময়ে বই আকারে প্রকাশ হয় বিশ্বকল্যাণ প্রকাশনী থেকে। সময়ের প্রয়োজনে বক্তৃতার খন্ডাংশ পুনঃরায় রিপ্রিন্ট করা।  সকলের নিকট আন্তরিক কৃতজ্ঞতা স্কীকার করছি।