Milestones

View Original

ইতিহাসের আয়নাঘরঃ হিদায়েতি শাপলা ও মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তা

By Abdur Rahman Bari

"অতীত নাই বলেই যে কেউ ইতিহাসহীন হয় তা মোটেও নয়। বরং আশ্চর্যের কথা হচ্ছে, নয়া জামানায় তারা আপন রুপ নির্মান করতে পারে না। ইতিহাসহীন মানুষ তাই নামহীন অথবা তাদের কপালে পরের হাতের নামকরন ই জোটে।"

~আন্টনি স্মিথ

লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সের ইতিহাসের মশহুর ওস্তাদ আন্টনি স্মিথের মারফতে প্রস্তাব করতে পারি যে ইতিহাস ও ইতিহাসতত্ত্বের রাজনীতিতে কর্তা হিসাবে হাজির না থাকলে অন্যের ইতিহাসের উপাদান হয়েই থাকতে হয়।ঔপনিবেশিক সময় হতে শাহবাগ উত্তর বাংলাদেশে বিদ্যায়তন ও বিদ্যায়তনের বাইরে যে আধিপত্যবাদি ইতিহাস ও ইতিহাসতত্ত্বের রাজনীতি আমরা দেখি তাতে শাপলার আন্দোলন কিছু ছক বাধা শব্দ বন্ধনে হাজির হয়।বাংলাদেশের সেক্যুলার ডিস্কোর্সে শাপলাকে সুযোগ সন্ধানী, সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদ ইত্যাদি গদবাধা শব্দের বন্ধনে আবদ্ধ করা হয়।ভাবখানা এমন যেন শাপলা হঠাৎ করে হাজির হওয়া পঙ্গপালের দল।আসলেই কি তাই?এই প্রবন্ধে মুলধারার উদারনৈতিক প্রগতিশীল ও মার্কসবাদীদের আধিপত্যবাদী ডিস্কোর্সের বাইরে শাপলার আন্দোলনের মানে বুঝবার কোশেশ করব। প্রবন্ধে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় কিভাবে মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তা হাজিরা দেয় ও উক্ত রাজনৈতিক কর্তাসত্তাকে কিভাবে সংকোচন বা গুম করে দেওয়া হয় তা ইতিহাসের আয়নায় সুলুকসন্ধান করব৷ইতিহাসের সিলসিলায় তরিকা-ই মহম্মদীয়া হিদায়েতি,ফরায়েযী,তাইয়ুনী,মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা, খিলাফত আন্দোলন,পাকিস্তান আন্দোলন,পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন, ছেদ, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম ও শাপলাতে যে মুসলিম আত্ম চৈতন্যের সাপেক্ষে রাজনৈতিক কর্তাসত্তার উত্থান-বিকাশ- ছেদ- নয়া নির্মান দেখি তার ঠিকুজির ( Genealogy) হদিস করাও অন্যতম বাসনা।প্রবন্ধে হিদায়েতি - শাপলার আন্দোলনের বুনিয়াদি ও বাসনাগত ঐক্য ধরা পড়বে। উক্ত প্রবন্ধ আধিপত্যবাদী বয়ানের সমান্তারালে চলা অবদমিত বয়ান হাজির করতে যাচ্ছে যা চলমান রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে ভবিষ্যত নির্মানের প্রস্তাব করে৷

১। হিদায়েতিদের সুলুকসন্ধান: তরিকা-ই মহম্মদীয়া, আত্ম চৈতন্যে ও সত্তার নির্মান

মুঘল সাম্রাজ্যের অবক্ষয়ের যুগে ঔপনিবেশিক সময়ে হিন্দুস্তানের উলেমাদের মাঝে ইসলামের ভূমিকা, মুসলমানের ধর্মীয়,সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে ভাবনা দেখা দেয়৷ প্রসিদ্ধ আলেম,হিন্দুস্তানি সমাজ সংস্কারক ও দিল্লির নক্সাবন্দিয়া সিলসিলার প্রধান শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভি প্রস্তাব করেন কোরআন-হাদীস ও মোহাম্মদ (সঃ) এর পথ তথা শরিয়তকে আঁকড়ে ধরতে।স্থানীয় ভাষায় কোরআনের তর্জমা, জনমানুষের বুলিতে ওয়াজ, নসিহত, দারসের যাত্রা শুরু হয় যার প্রাতিষ্ঠানিক কেন্দ্র ছিলো মাদ্রাসা ই রহিমিয়া৷ মওলানা শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভির সন্তান শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভি মাদ্রাসা ই রহিমিয়া তৈরি করেন৷ মাদ্রাসা ই রহিমিয়াতে বাংলা-বিহার- উত্তর প্রদেশ- পাঞ্জাব- দিল্লি থেকে তালেবে এলেম ও উলেমারা জড়ো হতো৷ তরিকা-ই মহম্মদীয়ার দাওয়াতি মেহনতের বুনিয়াদ ছিল মাদ্রাসা ই রহিমিয়া। শাহ আবদুল আযীয বুঝতে সফল হয়েছিলেন যে আন্দোলনের জন্য প্রতিষ্ঠান তৈরি অন্যতম শর্ত। তরিকা- ই মহম্মদীয়া নবী মহম্মদ (স:) এর অনুসৃত পথকে আম মানুষের কাছে আর্দশ হিসাবে পরিচিত করে তুলেছিল৷ মুঘল সাম্রাজ্য উত্তর ঔপনিবেশিক সময়ে মানুষের ধর্মীয় জীবনের নানা প্রশ্ন, অস্থিরতা ও তার সাথে সমাজের আন্তঃসম্পর্ক বুঝাপড়ায় ফতোয়ার সামাজিক এবং রাজনৈতিক দিকটা প্রকট আকারে হাজির হয়৷ফলে শাহী ফরমানের স্থান নেয় আলিমি ফতোয়া যার প্রভাব শুধু নিছক সম্ভ্রান্ত আশরাফ শ্রেণিতে সীমাবদ্ধ ছিল না, শহরের গন্ডি পেড়িয়ে গ্রাম গঞ্জের আম আদমিদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে৷ ইংরেজ রাজত্বে মুসলিমদের ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক মাসালায়েল জানতে উলামায়ে কেরামের কাছে সাধারণ জনগন প্রশ্ন করতে শুরু আরম্ভ করল। রাজ্য দারুল হারব নাকি দারুল ইসলাম এই প্রশ্নের উত্তরে শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভি ফতোয়া প্রদান করেন৷

“Shah Abdul al – Aziz issued the famous Fatwa in reply to a question asking whether India was Dar- Ul- Harab ( land of war) or Dar- Ul – Islam ( land of Islam) under the British ”

শাহ আব্দুল আযীয তার ফতোয়ায় আযিযিয়্যা পয়লা অংশে কাফি কিতাবের উসুল পেশ করেন৷ দারুল ইসলাম বা দারুল হারব হবার শরঈ শর্ত জুড়ে দেন।

سوال : دار الاسلام دار الحرب ہو سکتا ہے یا نہیں ۔؟ جواب : معتبر کتابوں میں اکثر یہی روایات مختار ہے کہ جب تین شرطیں پائی جائیں تو دار الاسلام دار الحرب ہو جاتا ہے در مختار میں لکھا ہے:

لَا تَصِيرَ دَارُ الإِسْلَامِ دَارُ الْعَرْبِ إِلَّا بِأمورِ ثَلَاثَة بإجراء أَحْكامِ أَهْلِ الشِّرْكِ بِاتصالِهَا بدار الْحَرْبِ وَبِأَنْ لَا يليق فِيهَا مُسْلِمَ أو ذمي آمِنا بِالإيمانِ الأَول عَلَى نَفْسِهِ وَدَارَ الْحَرْبِ تَصِير دار الإسلام بِإجراءِ أحْكامِ الإِسْلَامِ فِيهَا انتهى.

يینی: دار الاسلام دار الحرب نہیں ہو سکتا مگر جب تین امور پائے جائیں ۔

١۔ وہاں مشرکین کے احکام جاری ہو جائیں۔

٢۔ اور وہ دار الاسلام دار الحرب سے مل جائے۔

٣۔ اور وہاں کوئی مسلمان باقی نہ رہے اور نہ وہاں کوئی ایسا ذمی کافر رہ جائے جو پہلے مسلمانوں سے پناہ لیے کر رہا ہو اور اب بھی اسی پناہ کی وجہ سے ہو۔

أور دار الحرب اسی حالت میں دار الاسلام ہو جاتا ہے کہ اھل اسلام کے احکام اس میں جاری ہو جائیں اور کافی میں لکھا ہے :۔

إن المراد بدار الإسلام بلاد تجرى فيها حكم إمام المسلمين ويكون تَحْتَ قهره. وبدار الحَرْبِ بِلَاد تَجْرِى فِيهَا أمْرُ عَظِيْمِهَا وَتَكُونُ تَحْتَ قهره. انتهى

ترجمہ : یعنی دار الاسلام سے مراد وہ شہر ہیں جن میں مسلمانوں کے إمام کا حکم جاری ہو اور وہ شہر اس کے زیرحکومت ہوں. اور دار الحرب سے وہ شہر مراد ھیں جن میں ان شہروں کے سردار کا حکم جاری ہو اور اس کے زیر حکومت ہو ، یہ کافی کی عبارت کا ترجمہ ہے۔

অর্থাৎ ‘ এবং ‘কাফি’ কিতাবে লেখা হয়েছে: দারুল ইসলাম দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এমন দেশ যেখানে মুসলামানদের ইমামের হুকুম প্রয়োগ হয় এবং দেশটি তার কর্তৃত্বাধীন। আর, দারুল হারব দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এমন দেশ যেখানে সে দেশের শাসকের নির্দেশ বাস্তবায়িত হয় ও দেশটি তার কর্তৃত্বাধীন থাকে।"

[আংশিক অনুবাদ : মওলানা সাবের চৌধুরী ]

কাফি কিতাবের মূলনীতির ওপর ভর করে শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভি দারুল হারব ফতোয়া দেয়৷ উত্তর প্রদেশ, দিল্লি, কলকাতায় ইংরেজ শাসন জারি থাকায় তা দারুল হারবের আওতাধীন বলে উল্লেখ করে।

یہاں رؤسا نصارٰی (عیسائی افسران) کا حکم بلا دغدغہ اور بے دھڑک جاری ہے۔ اور ان کا حکم جاری اور نافذ ہونے کا مطلب یہ ہے کہ ملک داری، انتظاماتِ رعیت، خراج، باج عشر و مال گزاری، اموالِ تجارت، ڈاکوؤں اور چوروں کے انتظامات، مقدمات کا تصفیہ، جرائم کی سزاؤں وغیرہ (یعنی سول، فوج، پولیس، دیوانی اور فوجداری معاملات، کسٹم اور ڈیوٹی وغیرہ) میں یہ لوگ بطور خود حاکم اور مختارِ مطلق ہیں، ہندوستانیوں کو ان کے بارے میں کوئی دخل نہیں۔ بے شک نمازِ جمعہ، عیدین، اذان اور ذبیحہ گاؤ جیسے اسلام کے چند احکام میں وہ رکاوٹ نہیں ڈالتے لیکن جو چیز ان سب کی جڑ اور حریت کی بنیاد ہے (یعنی ضمیر اور رائے کی آزادی اور شہری آزادی) وہ قطعاً بے حقیقت اور پامال ہے۔ چنانچہ بے تکلف مسجدوں کو مسمار کر دیتے ہیں۔ عوام کی شہری آزادی ختم ہو چکی ہے۔ انتہا یہ کہ کوئی مسلمان یا غیر مسلم ان کی اجازت کے بغیر اس شہر یا اس کے اطراف و جوانب میں نہیں آ سکتا۔ عام مسافروں یا تاجروں کو شہر میں آنے جانے کی اجازت دینا بھی ملکی مفاد یا عوام کی شہری آزادی کی بنا پر نہیں بلکہ خود اپنے نفع کی خاطر ہے۔ اس کے بالمقابل خاص خاص ممتاز اور نمایاں حضرات مثلاً شجاع الملک اور ولایتی بیگم ان کی اجازت کے بغیر اس ملک میں داخل نہیں ہو سکتے۔ دہلی سے کلکتہ تک انہی کی عملداری ہے۔ بے شک کچھ دائیں بائیں مثلاً حیدر آباد، لکھنؤ، رام پور میں چونکہ وہاں کے فرمانرواؤں نے اطاعت قبول کر لی ہے، براہِ راست نصارٰی کے احکام جاری نہیں ہوتے (مگر اس سے پورے ملک کے دارالحرب ہونے پر کوئی اثر نہیں پڑتا)‘‘

"সেখানে খ্রিস্টান অফিসারদের আদেশ বাধাহীন ও বেধড়কভাবে চলতে থাকে। আর তাদের আদেশ জারি ও বলবৎ থাকার অর্থ হলো, দেশের দখল, প্রজাদের ব্যবস্থাপনা, খাজনা, উশর, সম্পদের বণ্টন, বাণিজ্যের সম্পত্তি, চোর-ডাকাতদের শাস্তির ব্যবস্থা, মামলা নিষ্পত্তি, অপরাধের শাস্তি (অর্থাৎ বেসামরিক, সামরিক, পুলিশ, দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিষয়, শুল্ক ও ডিউটি ইত্যাদি)—এসব বিষয়সমূহে তাদের একচ্ছত্র শাসনের অধিকার থাকা; এবং এসব ক্ষেত্রে হিন্দুস্তানিদের কোনো এখতিয়ার না থাকা। আসলে যদিও তারা ইসলামের বেশ কিছু আদেশ, যেমন জুমার নামাজ, ঈদুল আযহা, আজান এবং কোরবানিকে বাধা দেয়নি, তবে যে বিষয়টি মুসলিমদের মূল ও স্বাধীনতার ভিত্তি —বিবেক ও মতের স্বাধীনতা এবং নাগরিক স্বাধীনতা—সেগুলো ছিল লঙ্ঘিত এবং পদদলিত। সেই প্রেক্ষিতে তারা মসজিদগুলো ভেঙ্গে ফেলে। মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা শেষ হয়ে যায়। নিয়ম এমন ছিল যে, এ শহর বা এর আশেপাশে কোনো মুসলিমের বা অমুসলিম তাদের অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে পারবে না। সাধারণ যাত্রী বা ব্যবসায়ীদেরকে শহরে যাওয়ার যে অনুমতি দেওয়া হত, সেটিও জাতীয় স্বার্থ বা জনগণের নাগরিক স্বাধীনতার জন্য নয়; বরং তাদের নিজস্ব সুবিধার জন্য। অন্যদিকে সুজা-উল-মুলক ও ভেলায়তী বেগমের মতো খাস ব্যক্তিবর্গও তাদের অনুমতি ছাড়া এদেশে প্রবেশ করতে পারত না। তাদের দায়িত্ব ছিল দিল্লি থেকে কলকাতা পর্যন্ত। প্রকৃতপক্ষে, হায়দ্রাবাদ, লখনৌ, রামপুরের মতো বেশকিছু স্থানে—যেহেতু সেখানকার শাসকরা আনুগত্য স্বীকার করেছেন, তাই খ্রিস্টানদের এসব আদেশ সরাসরি জারি করা হয়নি। তবে এসব সমগ্র দারুল হারবকে প্রভাবিত করেনি।" [অনুবাদ :মওলানা আব্দুর রহমান রাফি ]

মওলানা শাহ আব্দুল আজিজকৃত রাজ্যে দারুল হারব ফতোয়ার কিছুকাল পরেই তার ছাত্র সৈয়দ আহমদ বেরেলভি ও পুত্র শাহ ঈসমাঈল দেহলভি শাহ আব্দুল আযীযের ফতোয়ায় আযিযিয়্যা হতে দারুল হারবে জেহাদের গুরুত্বকে সামনে এনে পাঞ্জাব- উত্তর প্রদেশ-বিহার ও বাংলায় দাওয়াতি সফরে বের হলেন৷ তরিকা-ই মহম্মদীয়া আঞ্চলিক খলিফা নির্বাচনের মাধ্যমে দাওয়াতি মেহনত শুরু করল।দাওয়াতে মাধ্যমে শরা কবুল করানো হত৷ শরা কবুল করনেওয়ালারা ঈমান-তৌহিদ- শিরক-সুন্নাহ তথা মহম্মদের পথ ও বেদাত সমন্ধে স্থানীয় পরিসরে দাওয়াত দিতে আরম্ভ করল৷এই দাওয়াতের ফলে বড় অংশ শরাওয়ালা তৈরি হল৷আহমদ শহিদ ও শাহ ঈসমাঈলের নেতৃত্বে বালাকোটে শিখদের বিরুদ্ধে জেহাদ শুরু হবার পর বাংলা-বিহার হতে শরাওয়ালা মহম্মদ সঃ এর চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বালাকোটে যোগ দেয়।বালাকোটের পর বাংলায় তরিকা-ই মহম্মদীয়া প্রচার প্রসারে বিস্তার লাভ করে৷ সাধারণ মানুষের কাছে তরিকা-ই মহম্মদীয়া দ্রুত পৌঁছায়তে থাকে।ফলে সেই সময়ে শ্রেণি প্রশ্ন, জাত -পাত সবকিছুকে ছাড়িয়ে ইসলাম মানুষের ভাব জগৎ বিরাজ করতেছিল।তরিকা-ই মহম্মদীয়ার সাথে আরবে বিকশিত ওয়াহাবি আন্দোলনের সাথে কোন সম্পর্ক ছিল না৷ ওয়াহাবি আন্দোলন বলে জনমানুষের ভাবজগৎ তথা তাদের চৈতন্যে কে বুঝা যাবে না। বরং এই ওয়াহাবি ভাবধারা বলে তাদের চৈতন্যের সংকোচন বা গুম করে দেওয়ার কুপ্রয়াস চালানো হয় বৈকি।সাব ওল্টার্ন স্টাডিজের অন্যতম সদস্য ও ভারতীয় বাঙালি ইতিহাসবিদ গৌতম ভদ্র এই সংকোচন বা গুমের বিষয়ে সর্তক ছিলেন৷

“ভারতের অষ্টাদশ আর ঊনবিংশ শতক ইসলাম ভাবজগতের আলোড়নের যুগ আর সেই আলোড়ন থেকে মুসলিম আতরাফরা একাবারে পিছিয়ে ছিল না। ঊনবিংশ শতকের সাংস্কৃতিক ইতিহাস রচনায় এই ধারা সবেমাত্র স্বীকৃত হতে চলেছে তাকে এক বাক্যে ওয়াহাবি বলা অসঙ্গত” [গৌতম ভদ্র]

ইতিহাসের বাজারে ওয়াহাবি মিথ ব্যবসা ও আরব, ইরান, তুরান তথা বহিরাগত ধারক বাহক আকারে নিজভূমিতে মুসলমানকে এলিয়েন আকারে হাজির করার সাথে ঔপনিবেশিক ক্ষমতা কাঠামোর রিশতা আছে যার সিলসিলা এখনো চলমান৷ ইংরাজ সরকার বিরোধী যেকোনো মুসলিমকে ওয়াহাবি, চুয়াড়, নেড়ে, দেড়ে ইত্যাদি বলা হত৷ হান্টারের উৎপাদিত ওয়াহাবি ভাবধারা নিয়ে মশহুর সাহিত্যিক, সম্পাদক ও শিক্ষক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ আরও নিশ্চিত করেন যে ওয়াহাবি আন্দোলনের সাথে তরিকা-ই মহম্মদীয়াকে মিলিয়ে পড়া হান্টারের অসততা৷

"হান্টার সাহেব নিজেই খামখেয়ালীর বশবর্তী হয়ে এর মধ্যে নজদের আবদুল ওহাব কর্তৃক গঠিত আন্দোলনের পরমাণু দেখতে পান।"[দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ]

এই ভূমিতে তৈরি হওয়া তরিকা-ই মহম্মদীয়ার আন্দোলন সাধারণ মুসলিমদের মাঝে যে আত্ম চৈতন্যের সঞ্চার করেছিল তার ই ধারাবাহিকতায়

পরবর্তী আন্দোলন গুলো বেগবান হয়৷এই সূচনালগ্ন নিয়ে অধ্যাপক হারলান পিয়ারসন তার বই " Islamic Reform and Revival in Nineteenth-Century India : The Tariqah-i Muhammadiyah " বলেন,

" In the historical transition from Mughal imperial rule to British colonial dominance, the Tariqah-i Muhammadiyah established the basis of a viable individual and communal identity among all classes of Indian Muslims and initiated the continuing process of Islamic Reform. " [Harlon Pearson ]

তরিকা-ই মহম্মদীয়ার প্রায় সম সাময়িক বাংলায় হিদায়েতিদের উত্থান হয়৷ মুসলিম আত্ম চৈতন্যের সাপেক্ষে তরিকা-ই মহম্মদীয়া ও হিদায়েতিরা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত।বাংলায় তিতুমীর ও তার অনুসারীরা নিজেদের হিদায়েতি বলে পরিচয় দিত৷ হিদায়েতিরা ছিল কৃষক,জোলা, কারিগর।শ্রেণি বিবেচনায় যাকে কারিগর হিসাবে শ্রেণি হিসাবেও চিহ্নিত করা যায়৷ এইসকল কৃষক, জোলা, কারিগর শ্রেণি তাদের নয়া পরিচয় নির্মান করলেন তা হলো হিদায়েতি।

হিদায়েতিদের আগের জীবনে জাহেলিয়াতে নিমজ্জিত থাকে৷ ইতিহাসে হিদায়েতি একটা গুরুত্বপূর্ণ বর্গ যা মহম্মদ (স:) সময় হতে আজ অবধি চলমান৷সরকারি নথিতে দেখা যায় বাংলার ইতিহাসে সেই হিদায়েতি তিতুমীর জাহেলিয়াতে ছিল কুস্তিগির, পালোয়ান ও জমিদারের লাঠিয়াল। জমিদারের খাজনা আদায় করে দেওয়া ই ছিল তার কাজ৷ এই ভাড়াটে লাঠিয়াল তিতুমিয়া খলিফা ওমরের মতোন হিদায়েত পেয়ে স্থানীয় জমিদারির চক্ষুশূল হল। হান্টারের বইয়ে হিদায়েতিদের কেও তরিকা-ই মহম্মদীয়ার মতো ওয়াহাবি বলা হয়েছে৷ ওয়াহাবি বলে হিদায়েতিদের রাজনৈতিক কর্তাসত্তা নাই করে দেওয়ার কুপ্রয়াস হান্টার হতে আজও বিদ্যমান৷ ইতিহাসের সিলসিলায় তরিকা-ই মহম্মদীয়া হতে হিদায়েতি অবধি মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তার যে বিকাশ তা ইনকার করতেই ওয়াহাবি, আরব,ইরান, তুরান ইত্যাদি চটকদারি শব্দ বন্ধনীতে আটকে ফেলা হয়। আত্মসত্তার এই রাজনীতি নির্মান তরিকা-ই মহম্মদীয়া, হিদায়েতি হয়ে খিলাফত আন্দোলন, পাকিস্তান আন্দোলন ও রাষ্ট্রগঠনের মাধ্যমে আরও বিকশিত হয়৷

২। নয়া মদিনা:মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তার বিকাশ ও পাকিস্তান

ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় আত্মসত্তার রাজনীতি নির্মানের যে ক্রমবিন্যাস তাতে পাকিস্তান আন্দোলন যুগান্তকারী ঘটনা।সেই ধারাবাহিকতায় উত্তর ঔপনিবেশিক সময়ে পাকিস্তান হয়ে ওঠে মুসলিম কর্তাসত্তা বিকাশের ভূমি৷ তরিকা-ই মহম্মদীয়া হইতে হিদায়েতি, খিলাফত আন্দোলন সহ পাকিস্তান আন্দোলনে মুসলিম আত্ম চৈতন্যের দিকটা আমলে নিয়ে সেক্যুলার দিকপাল আবুল মনসুর আহমদ তার আমার রাজনীতির পঞ্চাশ বছর বইয়ে উল্লেখ করেন,

“এতকাল পরে পিছন দিক তাকাইয়া একজন রাজনৈতিক কর্মী, লেখক ও সাংবাদিক হিসেবে আমার যা মনে পড়ে, তার সারমর্ম এই যে ভারতের মুসলমানরা আগা গোড়াই একটা রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র্য সত্তা হিসাবেই চিন্তা এবং কাজ করিয়াছে ”

সালমান স্যায়িদ তার " The meaning of Pakistan" লেখাতে পাকিস্তানের মানে বুঝবার কোশেশ করতে গিয়ে বলতেছেন যে পাকিস্তান তৈরি হয়েছিল নয়া মদিনা হিসাবে।স্যায়িদ ইতিহাসের একটু পিছনে ফিরে খিলাফত উত্তর নব্য তুরস্কের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং মতাদর্শের কুলুজি ধরার কোশেশ করতেছেন।স্যায়িদ তার "A Fundamental Fear Eurocentrism and The Emergence of Islamism"কিতাবে তফছির করেন যে কামালবাদ শুধু তুরস্কের স্থানীয় ফেনোমেনন নয়।উনি "The Impact of Kemalism"অংশে দেখান কামালবাদ ইডিওলজি ও পলিসি হিসাবে মুসলিম জাহানের বহু ভূখন্ডে গৃহীত হচ্ছিল।মুসলিম জাহানের ভূখণ্ডে কামালবাদের প্রভাব নিয়ে বলতে গিয়ে ইরানের রেজা শাহ পাহলভী, আফগানিস্তানের আমানউল্লাহ, ইন্দোনেশিয়ার সুর্কণ, মিশরের জামাল আবদেল নাসেরের প্রসঙ্গ হাজির করেন৷ সকলে আইডিয়া ও পলিসি হিসাবে কামালবাদ গ্রহন করেছিল৷ মুসলিম ভূখন্ডের শাসকদের কামালের পলিসি নিয়ে ছিল মুগ্ধতা। অপরদিকে, বুলবুলের সাহিত্য পত্রিকায় ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়ের মারফতে বাংলার শহরে মধ্যবিত্ত মুসলিম সমাজের একাংশ যে কামালবাদ প্রভাবিত ছিল তা শনাক্ত করতে বেগ পেতে হয় না। ঔপনিবেশিক বাংলার ভদ্রলোকীয় সংস্কৃতির ধারক বাহক উঁচু বর্ণের হিন্দুদের রেনেসাঁসের পদাঙ্ক অনুসরন করে আধুনিক প্রগতিশীল হয়ে ওঠতে চাওয়া মুসলিম সম্প্রদায় নিয়ে বুলবুলের পত্রিকার পয়লা সংখ্যায় সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায় প্রশংসা করেন।

“প্রসঙ্গত বলা আব্যশক যে, আলোচ্যকালে মুসলিম সমাজে জাগরণের সূচনা হয় অসহযোগ – খিলাফত আন্দোলনের পরে তুরস্ক প্রভৃতি রাষ্ট্র এ খিলাফত ধারণার জায়গায় গনতান্ত্রিক ও প্রগতিশীলতার লক্ষ্যে যে বিপ্লব সাধিত হয়, তার প্রভাবে। হিন্দুসমাজের দেখাদেখি মুসলমান সমাজে যে প্রভাব প্রতিফলিত হচ্ছিল তা, ধর্মভীরু, অশিক্ষিত মুসলমানের ভারে ন্যুজ, উগ্র ধর্মীয় চেতনার প্রভাবে প্রভাবিত সমাজে প্রান প্রতিষ্ঠা করতে পারছিলো না”

খিলাফত উত্তর ঔপনিবেশিক বাংলায় শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করা বাঙালি মুসলিমদের ওপর কামালবাদের প্রভাব স্পষ্ট। কামাল অনুপ্রাণিত এই ধারা সাহিত্য সংস্কতির বর্গে কাজ শুরু করে৷ শিখা গোষ্ঠী নামে বাঙালি মুসলমানের মাঝে যে ধারা প্রভাব ফেলে তারাও উক্ত বর্গের।এছাড়াও কামালবাদের প্রভাভে বাংলা সাহিত্যে উৎপাদিত হতে থাকে কামাল, আমানউল্লার জীবন অবলম্বনে কবিতা-নাটক ও গল্প৷গবেষক মজিরউদ্দিন মিয়া প্রবন্ধ বিচিত্রাতে সেই সময়ের চিত্র হাজির করেন৷

"সমসাময়িক কালে ইরান তুরানের কাহিনি অবলম্বনে বাংলায় বেশ কিছু নাটক রচিত হয়েছিল। বিষয় হিসাবে নব্য তুরস্ক হয়ে উঠেছিল জনপ্রিয়৷ এক্ষেত্রে মেহের উদ্দিন খানের তুর্কবীর, শেখ খবির উদ্দিনের তুরানবীর, বন্দে আলি মিয়ার যুগ মানব ও মসনদ স্মরণীয়৷"

অর্থাৎ, বাংলা সাহিত্যে কামালবাদের এই শনাক্তি সাংস্কৃতিক রাজনীতির প্রেক্ষিতে প্রবলভাবে হাজির হয়। স্যায়িদ বলতেছেন, পাকিস্থান আধিপত্যবাদী কামালবাদের বিপরীতে (Anti-Thesis)আকারে হাজির হয়েছিল।কামালবাদ মনে করে ইসলাম প্রভাবিত সমাজে মুসলিম নয় বরং জাতীয়তাবাদী চিন্তা ই কর্তাসত্তার বাহন হতে পারে৷ কিন্তু পাকিস্তান কোন ভাষাভিত্তিক বা নৃতাত্তিক আন্দোলনের ফসল না। পাকিস্তান রাজনৈতিক মুসলিম কর্তাসত্তার বুনিয়াদে তৈরি যা কামালবাদকে অস্কীকার করে৷

"Kemalism was a set of overlapping positions regarding the belief that only a national identity could be the vehicle of a hegemonic political subjectivity throughout the Islamosphere. The formation of Pakistan was a challenge to Kemalism. The movement for Pakistan is not based on ethnicity or language but rather a politicized Muslim subjectivity" (Salman sayyid )

মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তার বুনিয়াদে পাকিস্তান নয়া মদিনা হিসাবে গঠন হয়েছিল।জমিয়েতে উলামে ইসলাম ও দেওবন্দের সাবেক অধ্যক্ষ মওলানা শাব্বির আহমেদ উসমানি নয়া মদিনার প্রস্তাব ও তার তত্ত্বয়ান করেন৷পাকিস্তান আন্দোলন কালে মওলানা হোসাইন আহমদ মাদানির মুত্তাহিদা কাওমিয়াত তথা এক জাতি তত্ত্ব কে সামনে রেখে কংগ্রেস প্রচারণা শুরু করার পরে, মওলানা শাব্বির আহমদ উসমানি কোরআন - হাদীস - ফিকাহ ও উলামে দেওবন্দের আকাবিরদের বরাত দিয়ে তা খন্ডন করে নয়া মদিনার গঠনকে ভিত্তি প্রদান করেন৷

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَابْنُ أَبِي عُمَرَ، جَمِيعًا عَنِ ابْنِ، عُيَيْنَةَ - قَالَ أَبُو بَكْرٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، - عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ عُقْبَةَ، عَنْ كُرَيْبٍ، مَوْلَى ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لَقِيَ رَكْبًا بِالرَّوْحَاءِ فَقَالَ " مَنِ الْقَوْمُ " . قَالُوا الْمُسْلِمُونَ . فَقَالُوا مَنْ أَنْتَ قَالَ " رَسُولُ اللَّهِ " . فَرَفَعَتْ إِلَيْهِ امْرَأَةٌ صَبِيًّا فَقَالَتْ أَلِهَذَا حَجٌّ قَالَ " نَعَمْ وَلَكِ أَجْرٌ " .

অর্থাৎ "আবু বকর ইবনে আবি শাঈবা, যুহাইর ইবনে হারব ও ইবনে আবু উমর (রাহঃ) ... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রাওহা নামক স্থানে একদল আরেহীর সাক্ষাত পেলেন এবং তিনি বললেন, তোমরা কোন সম্প্রদায়ের লোক? তারা বলল, আমরা মুসলিম। তারা আরও জিজ্ঞাসা করল, আপনি কে? তিনি বললেন, আল্লাহর রাসুল। এরপর এক মহিলা তাঁর সামনে একটি শিশুকে তুলে ধরে জিজ্ঞাসা করল, এর জন্য হজ্জ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ এবং তোমার জন্য সাওয়াব রয়েছে।"[ সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১২৩ ]

মওলানা শাব্বির আহমেদ উসমানি সহিহ মুসলিমের এই হাদীসকে সামনে রেখে মুত্তাহিদা কাওমিয়াত বা এক তত্ত্বকে নাকচ করে দিয়ে ইসলাম ও মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তার বিকশিত হবার পথকে সুগম করে৷রাসূল স: একদল আরেহীকে যখন জিজ্ঞেস করলেন তোমরা কোন সম্প্রাদায়ের। জবাবে তারা মুসলিম বলার প্রেক্ষাপটে মওলানা শাব্বির আহমদ উসমানি বলেন তারা নিজেদের হিজাজি, ইয়ামেনি, নজদী বা কুরাইশী পরিচয় না দিয়ে মুসলিম পরিচয় দিয়েছিল৷ এই মুসলিম সম্প্রদায় পরিচয় দেওয়ার মাধ্যমে আসবিয়্যাত বা গোষ্ঠী সংহতি ভেঙে ফেলে৷

" It has been stated in this Hadith, that when the Prophet asked his flock what qaum are you, they did not reply that they were Hejazi,Yemeni, Najdi or Qureshi. All said in unison that they were Muslim. The arrival of Islam therefore meant the all the idols if Watani and Nasli Asabiyat broke down and all that reminded was their Islamic Identity. "(Sabbir Ahmad Usmani)

দ্বিজাতি তত্ত্বের ব্যখ্যা হাজির করে মওলানা শাব্বির আহমেদ উসমানি সাধারণ মুসলিমদের কাছে পাকিস্তান আন্দোলনকে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলেন৷ কলকাতার গড়ের মাঠে এই প্রাসঙ্গিকিকরন ফুটে ওঠে খুতবাতুল ছাদারাতে।

"এ সময়ে পাকিস্তান প্রাপ্তির জন্য মুসলিম লীগকে সম্ভাব্য সকল উপায়ে সাহায্য করা দরকার। কারন লীগ এ নির্বাচনে পরাজিত হলে সুদীর্ঘ কালের জন্য ভারতীয় উপমহাদেশের উন্নতির পথ হয়ে যাবে এবং জাতি হিসাবে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে৷ এ অবস্থায় মুসলিম লীগকে আসন্ন নির্বাচনে জয়যুক্ত করা সকল মুসলমানদের কর্তব্য।"(শাব্বির আহমদ উসমানি, খুতবাতুল ছাদারাত)

মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তার এই বিকাশে ভূমিকা রাখে মুসলিম লীগ, ঐতিহ্যবাদী জমিয়েতে উলেমায়ে ইসলাম, ইসলামপন্থী দল, বাংলার তরিকা-ই মহম্মদীয়া, বেরেলভী উলেমা কেরাম, জৈনপুরের পীর মাশায়েখ, ফুরফুরা শরীফের পীর মাশায়েখ, শর্শিনার পীর মাশায়েখ সহ আরও অনেকে ধারা - উপধারা৷

পাকিস্তান আন্দোলনে রাজনৈতিক কর্তাসত্তার নির্মানে ঐতিহ্যবাদী উলেমা সমাজ ও আধুনিক মুসলিম লীগের যে ঐক্যের নজির মেলে তা এক মাইলফলক বটে৷ ঐতিহ্যবাদী উলেমা সমাজের হাত ধরে তরিকা-ই মহম্মদীয়া, সিপাহি বিদ্রোহ, খিলাফত আন্দোলনে উপনিবেশবাদ বিরোধীতার সিলসিলার সাথে আধুনিক ইসলাম অনুপ্রাণিত মুসলিম লীগের কূটনীতির টেবিলে দর কষাকষি ও মুসলিম প্রজার জমিদারির বিরুদ্ধে ভূমির মালিকানা সংক্রান্ত লড়াই এক হয়ে পাকিস্তান আন্দোলনকে মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তার সুর ও সুঁতোয় বেঁধে ফেলে৷ ফলে, ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে ভোট দিতে উলেমা সমাজের সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে যায়।রাজনৈতিক নানা সভায় গিয়ে বক্তব্য দেয়। শর্শিনা, ফুরফুরা, জৈনপুরের পীর মাশায়েখ তাদের মুরিদদের মুসলিম লীগকে ভোট দিতে উৎসাহিত করে। পাকিস্তান কায়েম করতে মুসলিম লীগকে ভোট দিতে ফতোয়া অবধি দেওয়া হয়৷ দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার সাবেক মুফতি মওলানা মোহাম্মদ কাশুল ওসমানি মুসলিম লীগকে ভোট দিতে ফতোয়া জারি করেন৷

"পাকিস্তান সংগ্রামে যোগ দেওয়া জুরুরি এবং শরিয়ত মোতাবেক ওয়াজিব এবং কেবল মুসলিম লীগ প্রার্থীকে ভোট দেওয়া একান্ত কর্তব্য।"

দেওবন্দী উলেমায়ে কেরামের মতোন শর্শিনার পীর মওলানা নেছারউদ্দিন আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেন,

"বিগত ২৮ ই অক্টোবর, ১৯৪৫ কলিকাতা ওলামায়ে এছলাম কনফারেন্সে আমার খোৎবায়ে ছাদারাতে মোছলেম লীগের প্রতি আমার সমর্থন উহার এছলামের কথা ব্যক্ত করিয়াছি। বর্তমানেও আমি মোছলেম লীগকে মুসলমানদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং ইহার মঞ্জিল মুসলমানদের পাকিস্তান লাভের পন্থা হিসাবে স্কীকার করিতেছি৷ আমি সমগ্র মুসলমান ভাইদের এই জেহাদে একযোগে কাজ করার অনুরোধ করিতেছি " [ইতিহাসের ছিন্নপত্র ]

এছাড়া জৈনপুরের পীর মওলানা আব্দুস ছালাম, ফুরফুরা শরিফের পীর মওলানা আব্দুল হাই সিদ্দিক সহ প্রমুখ উলেমা সমাজ খুতবায় মুসলিম লীগকে মুসলমানের জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্বীকার করেন৷অপরদিকে পাকিস্তান রেনেসাঁস সোসাইটির মতোন আধুনিক মুসলিমদের সংগঠন যাদের একাংশ শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল তারাও মুসলিম কৃষক, উলেমা সমাজের সাথে রাজনৈতিক মুসলিম কর্তাসত্তার বুনিয়াদে আজাদ করো পাকিস্তান নীতিতে ঐক্যমতে পৌছায়।

"মঞ্জিল আর নয়কো দূরে

দিন উজল

সামনে চলো: সামনে চলো

যাত্রী - দল।

মুখর করো মৃত রাতের

পথ বিরান

আজাদ করো: আজাদ করো

পাকিস্তান।। "

মাসলাক, মাযহাব, ফিরকা, আকিদা,সংস্কৃতি, ভাষা,শ্রেণী, বর্ণ ও জাতিগত পরিচয় ছাপিয়ে মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তার পাটাতনে দাঁড়িয়ে উলেমা সমাজ, কৃষক প্রজা ও আধুনিক মুসলিমদের এই পদক্ষেপ ছিল যুগান্তকারী। ভোটে মুসলিম লীগের জয়। জিন্না -সোহরাওয়ার্দীর কূটনীতির টেবিলে দরকষাকষি এবং অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সেই আজাদী।আজাদী যেন ফররুখ আহমদের ওড়াও ঝান্ডা।

" মোরা মুসলিম সারা জাহান

ভরিয়া গড়িব পাকিস্তান

আজাদীর দিন হবে রঙিন

লভিয়া মোদের রক্ত লাল"

আজাদী উত্তর পাকিস্তানে মুসলিম কর্তাসত্তার বিকাশের ধাপ হিসাবে পয়লা সংবিধানের আলাপ সামনে হাজির হয়৷ সংবিধানের অভিভাবক ও সার্বভৌমত্বের মালিক নিয়ে বুনিয়াদি আলাপ শুরু হয়৷

قُلِ ٱللَّهُمَّ مَـٰلِكَ ٱلْمُلْكِ تُؤْتِى ٱلْمُلْكَ مَن تَشَآءُ وَتَنزِعُ ٱلْمُلْكَ مِمَّن تَشَآءُ وَتُعِزُّ مَن تَشَآءُ وَتُذِلُّ مَن تَشَآءُ ۖ بِيَدِكَ ٱلْخَيْرُ ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌۭ ٢٦

অর্থাৎ “বলুন ইয়া আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল” (আল - কোরআন, ৩:২৬)

সার্বভৌমত্ত্বের মালিক আল্লাহ এই মর্মে পাকিস্তানের সংবিধানে হাকিমিয়্যা -ই- লিল্লাহি যুক্ত করা হয়। পঞ্চাশের দশকে সকল ধারার ইসলামপন্থী, ঐতিহ্যবাদী উলেমা, ফুরফুরা পীর, শর্শিনার পীর, বেরেলভি ধারা, জৈনপুরের পীর সংবিধানে হাকিমিয়্যা নিয়ে একমত হন৷এই প্রয়াসে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখেন সৈয়দ আবুল আলা মাওদুদি, যা তাত্ত্বিক - রাজনৈতিক - ধর্মীয় দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ন।

বিঔপনিবেশিকরন প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে ইসলামিক রিপাবলিক অফ পাকিস্তান আত্মপ্রকাশ করে যেখানে সাংবিধানিক সভ্রেন পাওয়ার (হাকিমিয়্যা) আল্লাহর বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।সংবিধানের প্রথমেই আল্লাহর সার্বভৌমত্ব স্কীকার করে নেওয়া হয়৷

"Sovereignty over the entire world belongs to Allah Almighty alone and the authority which He has delegated to the state of Pakistan, through it’s people for being exercised within the limits prescribed by Him is sacred trust."[Pakistan Constitution ]

সাংবিধানিক কাঠামোয় কলোনিয়াল লিগ্যাসি দূর করতে প্রস্তাবনা হাজির করেন উলামায়ে দেওবন্দ শাব্বির আহমদ উসমানি, মওলানা মোহাম্মদ শফি মওলানা জাফর আহমদ উসমানি, ফুরফুরার পীর আবু বকর সিদ্দিক, শর্শিনার পীর আবু নেছারউদ্দিন, মওলানা আবুল আলা মওদুদি সহ প্রমুখ। "উলামায়ে দেওবন্দের এই ধারা “খিলাফত আলামিনহাজিন নবুওয়াত” এর আদলে পাকিস্তানে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য মেহনত করেন৷[তরিকুল হুদা:বাঙলানামা ]।সিলেটে জমিয়েতে উলামায়ে ইসলামের এক সভায় পাকিস্তানের ইসলামি সংবিধানের এক খসড়া পেশ করা হয় যা করাচিতে আল্লামা সুলাইমান নদভির তত্ত্বাবধানে ঐতিহাসিক ২২ দফা সাংবিধানিক মুলনীতি গৃহীত হয়৷সকল ধারার উলেমায়ে কেরামের পাকিস্তান রাষ্ট্র নিয়ে এই পদক্ষেপ ছিল ঐতিহাসিক। মুলধারা সেক্যুলার সমাজ ও হীনমন্য উলেমাদের একাংশ দাবি করে সংবিধানে হাকিমিয়্যা ও ইসলামি শাসন ব্যবস্থার শুধুই মওলানা মওদুদির প্রস্তাবনা৷ এই সরলীকরন ও সংকোচনের মাধ্যমে জামাতে ইসলামী ফোবিয়া (ইসলাম ফোবিয়ার বিশেষ রুপ) তৈরির ভিতর দিয়ে মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তাকে নাকচ করবার বাসনা প্রকাশ পায়৷ হাকিমিয়্যা নিয়ে যে উলামায়ে দেওবন্দের কোন সম্যসা ছিল না, এমন কি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ই এর অগ্রগামী ছিল তা দেদারসে বেমালুম করে দেওয়া হয়।অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ওস্তাদ ওসামা আল আযমি হাকিমিয়্যাকে প্রি- মর্ডান ইসলামিক ডিস্কার্সিভ ট্রাডিশনে শনাক্ত করেছেন৷ আযমি নদভির হাকিমিয়্যার সঙ্গে একাত্মতাও তুলে ধরেছেন তার " Locating Hakimiyya in Global History : The Concept of Sovereignty in Premodern Islam and It’s Reception after Mawdudi and Qutb" আর্টিকেলের "Nadwi's conception of Sovereignty "পরিচ্ছদে ।অতিরিক্ত রাজনীতিতে গুরুত্ব দেওয়ায় যদিও মওলানা আবুল হাসান আলি নদভি মওলানা মওদুদির পর্যালোচনা করেছেন, কিন্তু নদভি হাকিমিয়্যা কে খারিজ করেন নাই।

“Nadwi is not actually opposed to Mawdudi's project of establishing an Islamic state that upholds the sharia, broadly understood, as it’s exclusive legislative framework"(Usaama Al- Azami)

পাকিস্তান যে নয়া মদিনা আকারে হাজির হয়েছিল তা উত্তর ভারতের শাব্বির আহমদ উসমানির আলাপের পাশাপাশি বাংলার ফরায়েজী উলেমা সম্মেলন দিয়েও বুঝা যায়। ফরায়েজীরা পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের আগে রাজ্যেকে দারুল হারব মনে করে ঈদ ও জুমার নামাজ আদায়ের বিরোধী ছিলেন৷ পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের পরে ১৯৪৭ সালে ফরায়েজী উলেমা সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় পাকিস্তানে ঈদ ও জুম্মার নামাজ বৈধ৷দারুল ইসলামে ঈদ ও জুম্মার নামাজ বৈধ হয়।

"পূর্বে ফরায়েযীগণ দেশটিকে 'দারউল হারব' বিবেচনা করায় জুমআ এবং ঈদের নামাজ অবৈধ মনে করেছিল৷ কিন্তু এখন থেকে আল্লাহর রহমতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠ হওয়ায় এই নামাজ দেশে বিধিসম্মত ভাবে বৈধ করা যাবে "(ফরায়েজী উলেমা সম্মেলন -১৯৪৭)

মুসলিমদের কাছে পাকিস্তান ছিল নয়া মদিনা যেখানে মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তার বিকাশ ঘটেছিল যার ছাপ সাংবিধানিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে প্রকাশ পায়৷

৩। একাত্তরের গৃহযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম বা গন্ডগোল

یہ آزادی جھوٹا ہے

لاکھوں آدمی بھوکا ہے

পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের পরে কমিউনিস্টরা এই "আজাদি ঝুটা হ্যায়, লাখো আদমি ভুখা হ্যায়" স্লোগান দিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রে নৈরাজ্য,পঞ্চাশের দশকে কমিউনিস্টদের অনুপ্রবেশের রাজনীতি, নিয়ন্ত্রণ ফর্মূলা ও ষাটের দশকে কলকাত্তাই রেনেসাঁস অনুপ্রাণিত বাঙালি জাতীয়তাবাদী সেক্যুলার রাজনীতি পাকিস্তানের সামরিক শাসনের সুযোগে একযোগে অভিন্ন বাসনায় পাকিস্তান রাষ্ট্রের বুনিয়াদে আঘাত আনে৷ যার ই ধারাবাহিকতায় সিরাজুল আলম খানদের নিউক্লিয়াস, রেহমান সোহবানের দুই অর্থনীতি তত্ত্ব, বিহারি জেনোফোবিয়া ও ১০ ই এপ্রিল সংবিধানে অফিসিয়ালি পলিসি হিসাবে কামালবাদ আত্মপ্রকাশ করে৷ এপ্রিলের ঘোষণা পত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের যে মূলনীতি তা কামালবাদী চিন্তার রুপ যা মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তাকে ইনকার করে গেরুয়া - বামপন্থার ইতিহাসের বয়ানকে সার্বজনীন আকারে প্রকাশ করে৷

৭১ এর এপ্রিল ঘোষণা পত্র, সংবিধান, কামালবাদ, আওয়ামী লীগের মুজিবনগর সরকার ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধীর অনুগত আইনবিদ সুব্রত রায় চৌধুরীর সম্পর্ক নিয়ে রাজনীতি তত্ত্ব বিশ্লেষক তরিকুল হুদা পাকিস্তানের সংবিধানের প্রথমে উল্লেখিত আল্লাহর সার্বভৌমত্বের সাক্ষ্যকে মুছে দিয়ে নয়া সংবিধান প্রনয়ণের সাথে কামালবাদের সম্পর্ক তুলে ধরেন৷ বাংলাদেশের সংবিধানের হাকিকত নিয়ে হুদা ভারতীয় চেহারার অবয়বের কথাও উল্লেখ করেন৷

"চেহারায় ভারতীয়, আত্মায় মার্কিন আর মনে ফরাসী স্পিরিটের সরাসরি প্রতিফলন ঘটলো পূর্ব পাকিস্তানের সংবিধানের সর্ব প্রথমে উল্লেখিত আল্লাহর সার্বভৌমত্বের সাক্ষ্যকে মুছে দিয়ে শুধুই সাম্য-মানবিক মর্যাদা-সামাজিক ন্যায় বিচার রাখার ভিতর দিয়ে। এটাই তুরস্কের উগ্র সেক্যুলারবাদ তথা কামালবাদী সেক্যুলার পন্থার প্রথম ছোবল এই ভূ-খন্ডে।"

দীর্ঘ ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধের ধরন হয়ে দাঁড়ায় গৃহযুদ্ধ ধরনের।একাত্তর সংক্রান্ত সাধারণ মানুষের যাপনে যে শব্দটা প্রচলিত তা হলো গন্ডগোল। কিন্তু বাঙালি জাতীয়তাবাদী সেক্যুলার বয়ান একাত্তরকে একটা মহান যুদ্ধ আকারে তা হাজির করে।অপরদিকে দিকে জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই বা উপনিবেশের বিরুদ্ধে মুক্তি সংগ্রামের লড়াই বলে বুর্জোয়া ডেমোক্রেটিক বিপ্লব করতে চাওয়া ধারাও বাঙালি জাতীয়তাবাদী সেক্যুলার গ্রান্ড ন্যারেটিভের মাঝে সাচ্ছন্দ্যে একাকার হয়ে যায়। এই বিলীন হবার দরুন নিরীহ বিহারি,পাহাড়ি, পাকিস্তানপন্থী নিরীহ সিভিলিয়ান,চীনপন্থী কমিউনিস্ট ও উলেমা সমাজের উপর চলা গনহত্যাও গুম হয়ে যায় ইতিহাসের আয়নাঘরে৷ ইতিহাসের আয়নাঘরে এই বয়ানকে গুম করে দেওয়ার মাধ্যমে উভয় ধারার রাষ্ট্র বাসনা বাহাত্তরের সংবিধানে প্রতিফলিত হয়। বাহাত্তরের সংবিধান অনুযায়ী ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়। এই ভূখন্ডের মানুষের তমুদ্দিন- তহযিব ও রাজনৈতিক কর্তাসত্তাকে অপরায়ন করে সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক ভাবে গৃহীত প্রকল্পের বুনিয়াদ হলো কামালবাদ৷এই কামালবাদ আরও স্পষ্ট হয় বাহাত্তরের সংবিধানের ১২, ৬৬, ৭৮ ও ১২২

অনুচ্ছেদে। "সংবিধানের ১২, ৬৬, ৭৮ ও ১২২ অনুচ্ছেদে অনুযায়ী ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়" (সুভাষ সিংহ রায়)

বাঙালি জাতীয়তাবাদি সেক্যুলার গ্রান্ড ন্যারেটিভের উৎস ইন্ডিক থটে। ইন্ডিক থটের কারনে রাষ্ট্র গঠনকালীন বাংলাদেশ মুসলিম, ইসলাম ও ইসলামপন্থাকে সত্তাতাত্তিক অপর (Ontological Other)করে তোলে৷ইসলাম ও সেক্যুলারইজম নিয়ে কাজ করা নৃতত্ত্ববিদ তানজিন দোহার ইন্ডিক থটের চরিত্র শনাক্তকরণ থেকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সত্তাতাত্তিক অপর হিসাবে ইসলাম হাজির হওয়া বুঝতে সহজ হয়৷

"ইন্ডিক থটের সাথে মনোথিইজম particularly ইসলামের সাথে Conflict টা Essential এন্টাগোনিইজম।ইন্ডিক থটের ভিতর থেকে যে Universalism এর আর্বিভাব হয় তা essentially একটা ফ্যাসিস্ট Universalism."

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের যে ফ্যাসিস্ট সার্বজনীনবাদ তা অন্তর্ভুক্তিমুলক নয়৷কারন ইসলামকে সরাসরি নিতে পারে না।যদি ইন্ডিক থট ইসলামকে ইনক্লুড করতে চায় তাহলে আগে ডিজআর্টিকুলেট করে নেয়। এই ডিজআর্টিকুলেট করতে হয় কারন ইসলাম সত্তাতাত্তিক অপর (Ontological Other)

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কাঠামো ও মজ্জাগত কামালবাদী ফ্যাসিস্ট রুপের প্রকাশ হলো শাহবাগ। শাহবাগ রোগের লক্ষণ মাত্র, রোগ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূলে৷ শাহবাগ আন্দোলন ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বুনিয়াদি বিষয় নিয়ে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান সত্য ই বলেছেন।

"শাহবাগে সমবেত প্রতিবাদ সমাবেশ হইতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের হৃদরোগ কোন জায়গায় তাহার আলামত স্পষ্ট। ১৯৪৭ সালে বিট্রিশ শাসিত ও বিট্রিশ প্রভাবিত ভারত ভাগ হইয়া ছিল ধর্মভিত্তিক সম্প্রদায় পরিচয়কে বড় করিয়া৷ আর ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ গঠন করা হইয়াছে সেই পরিচয়কে নাকচ করিয়া। "(সলিমুল্লাহ খান)

শাহবাগ সংক্রান্ত যাবতীয় আলোচনা বিদ্যমান তা শুধুই কিছু শব্দে৷ রাষ্ট্রপ্রকল্প, বিচারহীনতা ও সাংস্কৃতিক ভাবে উৎপাদিত বাইনারির মোড়কে গুম করে দেওয়া হয় শাহবাগ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বুনিয়াদি মামলা যা এখনো অমীমাংসিত। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কামালবাদি ফ্যাসিস্ট চরিত্র ইতিহাসের সিলসিলায় যে মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তা হাজির ছিল তাকে অবদমন করতে বাধ্য করে৷ আধিপত্যবাদি বাঙালি জাতীয়তাবাদী সেক্যুলার রাজনীতির সমান্তারালে অবদমিত হয়ে চলতে থাকে মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তার রাজনীতি। উক্ত অবদমন প্রকাশিত হয় শাপলার আন্দোলনে। অতএব, এ কথা বললে ভুল হবে না যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বুনিয়াদি কামালবাদের প্রকাশ হলো শাহবাগ যা মজ্জাগত ভাবে মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তাকে ইনকার করে৷ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক বি - ইসলামীকরণ নগ্নভাবে দেখা যায় শাহবাগ আন্দোলনে৷ জন্মলগ্নে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও শাহবাগের অভিন্ন বাসনা অধ্যাপক ফাহমিদুল হক একই সুঁতোয় গেঁথেছেন।

"শাহবাগ আন্দোলনের তাৎপর্য কেবল যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবির মধ্যেই সীমিত থাকেনি। শাহবাগের আন্দোলন প্রচলিত আপস-দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিরুদ্ধেও একটি প্রতিবাদ ছিল। সরকারদলীয় কোন কোন মন্ত্রী-নেতা এই সমাবেশে গিয়ে অসম্মানিত হয়েছেন বা কথা বলার সুযোগ পাননি। তরুণরা গণতন্ত্র-জাতীয়তাবাদ-সমাজতন্ত্র-ধর্মনিরপেক্ষতাভিত্তিক একাত্তরের চেতনা পুনরায় ফিরিয়ে আনতে চেয়েছে এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। একাত্তরে জনমানুষের শ্লোগান ‘জয় বাংলা’ শাহবাগের শ্লোগানে পরিণত হয়। পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিপরীতে শাহবাগ একাত্তর সালের মতই ধর্মনিরপেক্ষতাকে সামনে নিয়ে আসে। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার দাবিও শাহবাগ থেকে উচ্চারিত হয়।" [ ফাহমিদুল হক]

শাহবাগের সাথে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কামালবাদি বুনিয়াদ ধরা পড়ে লেখক বিধান রিবেরুর শাহবাগ বইয়ে৷ রিবেরু আমাদের ৭২ এর কামালবাদী সংবিধানের স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়ে বলে শাহবাগ নিছক যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিষয় না৷ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সঙ্গে শাহবাগের রয়েছে গভীর সম্পর্ক৷

"২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলন শুদ্ধ রাজাকারের ন্যায়বিচার নয় বরং মুক্তিযুদ্ধের সময়কার যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা সেটারও প্রতিফলন বিলকুল। নয়তো ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিপক্ষে কেন কথা উঠবে এই আন্দোলনে। এই আন্দোলনে শুরুটা ফাঁসির দাবি দিয়ে শুরু হলেও যে জায়গায় এসে ঠেকেছে, তারপর আমি আশা করবো এই আন্দোলন এমন জায়গায় যাক, যেখান থেকে বলা হবে বাংলাদেশ হবে সত্যিকারের অসাম্প্রদায়িক এবং এদেশের সংবিধান শুরু বিশেষ কোনো ধর্মগ্রন্থের বাণী দিয়ে হবে না। ন্যায়ের পক্ষে এই গণদাবী সফল হোক। এগিয়ে যাক ঘূর্ণির দিকে। ঘূর্ণি মানেই তো রেভুলুশন ওরফে বিপ্লব।"

শাহবাগকে একাত্তর ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র থেকে বিছিন্ন করে দেখবার কোন সুযোগ নেই।বিছিন্ন করে দেখবার সাথে কামালবাদী বাসনার সংযোগ আছে।বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বুনিয়াদি সম্যসার প্রকাশ শাহবাগকে সরকার প্রকল্প - বিচারহীনতার দেখবার মাধ্যমে শাহবাগকে একটা প্রয়োজনীয় দূর্ঘটনা হিসাবে তুলে ধরে যা শাহবাগের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্কের সংকোচন ঘটিয়ে নিরপেক্ষতার ভাষায় হাজির করে৷ অর্থনীতিবিদ বিনায়ক সেনের বরাতে এই সংকোচনের মাত্রা অনুমান করতে পারি।

"আমার চোখে শাহবাগ চত্ত্বরের আন্দোলনের একটি মৌলিক অভিপ্রায় হচ্ছে- সরকারে হোক, বিরোধী দলে হোক, সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে আমরা দেখতে চাই রাজনীতিতে, সমাজ - সংগঠনে, সংস্কৃতিবলয়ে৷ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি মানেই আওয়ামী লীগ নয়; বিএনপির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশে আছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। " [বিনায়ক সেন]

বিনায়ক সেন থেকে সিদ্ধান্ত নিতে বেগ পেতে হয় না যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নামক বাঙালি জাতীয়তাবাদী সেক্যুলার গ্রান্ড ন্যারেটিভের শব্দ বন্ধনে ফেলে রাষ্ট্রের বুনিয়াদি সম্যসার ই নির্দেশ করে৷ সূভাষ সিংহ রায়, বিনায়ক সেন, ফাহমিদুল হক, সলিমুল্লাহ খান ও বিধান রিবেরুর লেখা হইতে সুস্পষ্ট যে শাহবাগের সাথে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কামালবাদী বুনিয়াদের সাথে রয়েছে গভীর সম্পর্ক।

৪। নাড়কেলবেড় হইতে শাপলা : মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তার বিকাশ, অবদমন ও নয়া উত্থানঃ ইতিহাসের নানা অলিগলিতে মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তার দেখা মেলে যার মাঝে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো নাড়কেলবেড় ও শাপলা। নাড়কেলবেড়ের সাথে তিতুমীরের আন্দোলনের রিশতা সকলের ই জানা৷ কিন্তু তিতুমীর ও তার অনুগামীরা নিজেদের হিদায়েতি বলে পরিচয় দিত৷ কৃষক, জোলা, কারিগর নিজেদের আত্মসত্তার রাজনীতির পয়লা পদক্ষেপ আকারে নয়া পরিচয় নির্মান করলো৷ কারন নামবিহীন ইতিহাস ও ইতিহাস তত্ত্বের উপাদান হয়ে থাকতে হয়৷ নামের ( Names) সাথে চৈতন্যের (Consciousness) সম্পর্ক আছে৷আত্ম চৈতন্যে (self-consciousness)হলো সংবিৎ পাওয়া। এই সংবিৎ বা হুশ পাবার মাধ্যমে মানুষ আত্ম-সচেতন হয়ে ওঠে৷ ফলে নিজকে আবিষ্কার করতে পারায় আত্মসত্তাকে প্রতিষ্ঠা করতে নজর দেয়৷তাই নাম ভুলিয়ে দেওয়া মানে আত্ম চৈতন্যেকে( self-consciousness) বেমালুম করে দেওয়া। এই বেমালুম করে দেওয়া কর্তা আকারে নাকচ করার কুপ্রয়াস।

"কয়েকটি জোলা মিলে তাঁত ফেলে মৌলবি সব হল।

মুলকগিরি করি ফিরি, লাউঘাটিতে গেল"

লৌকিক ছড়ায় হিদায়েতিদের সত্তাগত নির্মানের দিকটা প্রকট ভাবে ফুটে।এখানে হিদায়েতিরা মুলুকগিরির মাধ্যমে বিদ্যমান ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে৷নয়া সার্বভৌমত্বের জানান দেয়। নয়া সার্বভৌমত্ব ও স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক অবস্থান জানান দেওয়াতে বিদ্যমান ক্ষমতার চোখে হুমকি হিসাবে আর্বিভূত হয়। ফলে হিদায়েতিদের চলাফেরা, আচার-আচরন, জেয়াফত, কোরবানি, দাড়ি রাখা, একসাথে খানাপিনা বিদ্যমান ক্ষমতাকে আতঙ্ক গ্রস্ত করে তুলে৷ বিদ্যমান ক্ষমতা কাঠামোর উপরের মহলের জন্য এই দশা ভয় উদ্রেক করে৷ বিদ্যমান ক্ষমতা তথা মনিবের কপালে ভয়ের রেখাচিত্র ফুটে উঠে। হেগেল তার বই ”Phenomenology of Spirit ” এর ‘Independence and Dependence of Self consciousness : Lordship and Bondage ” অধ্যায়ে দাস চৈতন্যে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে “ভয়”কে একটি মুহূর্ত উল্লেখ করেছেন৷

"However, the feeling of absolute power in general, and in this singularity of service, is only dissolution in itself, and although the fear of the lord is indeed the beginning of wisdom” [G.W.F. Hegel]

দাসের চৈতন্যে এই ভয় তার দাসত্বকে দেগে দেয়। ভয়ের মুখ কোনদিকে ফেরান আছে তা দিয়ে দাস তার প্রভুর সত্তা থেকে পৃথক করতে পারে।" এই ভয় উত্তেরিত হয় ত্রাসে; বিদ্রোহের মাধ্যমে দাস তার মনে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে৷ কর্তা ও কর্মের সম্পর্ক বদলে যায়; দাসের ভয় রুপান্তরিত হয় ত্রাস করার ক্ষমতায়, প্রভুর দাপট বদলে যায় আতঙ্কে।"(গৌতম ভদ্র)

সম্পর্ক বদলে যাওয়ায় দাস হয়ে ওঠে প্রভূ৷ ফলে প্রভূর কর্তাসত্তা নাকচ করে দাস নয়া কর্তা হয়ে ওঠে। হেগেলীয় দর্শনে প্রভুর শক্তি প্রথমে খন্ডিত হয়, পরে তা বিপর্যস্ত হয়। দাস নিজের সত্তাকে করে তোলে প্রধান, যার ফলে নিজ ভূমিতে সে অধিষ্ঠিত হয়ে তার জগৎ প্রতিষ্ঠা করতে চায়৷

জমিদারের হুকুমে হিদায়েতিদের দৈনন্দিন জীবনের নিমিত্তে গড়ে তোলা মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়৷ হিদায়েতিদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক জীবন নিয়ে জমিদার, জমিদার পুত্রের তাচ্ছিল্য - অবমাননা। পাইক পেয়াদা কর্তৃক হিদায়েতিদের দাড়ি কেটে ফেলা, দাড়ির উপর জমিদারের কর আরোপ। দারোগার বদমাইসি সহ নানা বাধার কারনে বিদ্যমান ক্ষমতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে হিদায়েতিরা।

প্রকাশ্যে গরু কোরবানি, জেয়াফত করে একসাথে ভোজ, পাইক পেয়াদা, দারোগাদের তাড়া, জমিদারকে হত্যার মাধ্যমে নয়া ক্ষমতার জানান দেয় হিদায়েতিরা৷বিদ্রোহের মাধ্যমে আঞ্চলিক ও জাতীয় সরকার বাহাদুর তথা বিদ্যমান ক্ষমতার মনে ভয় প্রবেশ করায়৷আঞ্চলিক ও সরকার বাহাদুরের ভয় ত্রাসে পরিনত হয়৷ বিদ্রোহের মাধ্যমে মনে সন্ত্রাস তৈরি করে৷ নয়া সার্বভৌমত্ব জানান দিয়ে হিদায়েতিরা রাজনৈতিক কর্তা আকারে হাজির হয়৷ হিদায়েতিরা আঞ্চলিক ও জাতীয় সরকার বাহাদুর তথা বিদ্যমান ক্ষমতাকে নাকচের মাধ্যমে আঞ্চলিক ও জাতীয় সরকার বাহাদুরের আতঙ্ক বাড়িয়ে তুলে যা হিদায়েতিদের বিদ্রোহের পয়লা পরিচয়। হিদায়েতিদের এই বিদ্রোহ যেন ছোঁয়াছে রোগের মতোন যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে৷ হিদায়েতিদের এই বিদ্রোহ সরকার বাহাদুরের মনে আতঙ্ক থেকে ত্রাস সৃষ্টি করে৷ হিদায়েতিরা নিজেদের সত্তাকে প্রধান করে তোলে ও নিজস্ব জগৎ প্রতিষ্ঠার ডাক দেয়। হিদায়েতিরা ক্ষমতার ভাষায় বলে উঠে খোদার জমিনে খোদার বাদশাহী৷ দীন মহম্মদ প্রতিষ্ঠায় হিদায়েতিদের রাজনৈতিক কর্তাসত্তা হাজির হয়৷ খোদার জমিনে খোদার বাদশাহী বলার মধ্য দিয়ে প্রাক আধুনিক জামানার হাকিমিয়্যা তথা খোদার সার্বভৌমত্বের প্রকাশ পায়৷এই খোদার বাদশাহী বিবর্তনের মাধ্যমে পাকিস্তানের সংবিধানে হাকিমিয়্যা হিসাবে আরও বিকশিত হয় যার সাথে একাত্তরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদয়ের পরে ছেদ ঘটে। এই ছেদে মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তা অবদমিত করতে বাধ্য করে৷ শাপলার আন্দোলনের সময় তার নয়া উত্থান ঘটে৷

শাপলার আন্দোলন ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বুনিয়াদি কামালবাদের প্রকাশ শাহবাগের বিরুদ্ধে৷শাহবাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গোড়ার রোগ চিহ্নিত হয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কাঠামো ও মজ্জাগত ইসলাম বিদ্ধেষ, বি - ইসলামিকরণ প্রকল্পের উন্মোচন হয় শাহবাগে। শাপলার জমায়েত ছিল রাসূলের শানে গোস্তাখির প্রতিক্রিয়ায়, এর সাথে ছিল চলমান ইসলামপন্থীদের উপর অবিচার ও জুলুমের কারনে সৃষ্ট ক্ষোভ। শাপলাতে সকল মুসলিম নিজেদের রাসূলের সম্মানে, ভালবাসায় সমবেত হয়েছিল। উলেমা সমাজের নেতৃত্বে সাধারণ জনগনের অংশগ্রহণে এই আন্দোলন বেগবান হয়। শাপলা বিদ্যমান ক্ষমতাকে প্রশ্ন করে নয়া সার্বভৌমত্বের ডাক দেয়৷শাহবাগের আঞ্চলিক জমিদারির মনে আতঙ্ক তৈরি করে যা ছোঁয়াছে হয়ে সরকার বাহাদুরের মনেও ত্রাস তৈরি করে৷ শাপলাতে ১৩ দফার প্রথম দফাতেই ঘোষণা করা হয় সংবিধানের অভিভাবক আল্লাহ ও তার সার্বভৌমত্বের। এই দফার মাধ্যমে শাপলা রাজনৈতিক কর্তা আকারে হাজির হয়।শাপলার আন্দোলনের নাড়িপোতা হিদায়েতিদের আন্দোলনে। শাপলার রাজনৈতিক কর্তাসত্তার প্রকাশ তার ১৩ দফা দাবীতেই বিদ্যমান। শাপলার রাজনৈতিক কর্তা আকারে হাজির হবার বিষয় টা আরও স্পষ্ট করে বুঝতে রাজনীতি তাত্ত্বিক নাজমুল সুলতানের নিচের আলাপকে যুক্ত করা যায়৷

"তের দফা দাবি হেফাজতকে তার রাজনৈতিক শরীর প্রদান করেছে। কারণ দাবিদাওয়া কেবল একটা রাজনৈতিক প্রবণতাকে ভাষা দেয় না, তা ঠিক করে দেয় কোন অবস্থান, কোন ভিত্তির নিরিখে দাবিকারী রাজনৈতিক প্রবণতা একটা গোষ্ঠী আকারে গড়ে উঠবে।দাবিদাওয়া যদিও রাজনৈতিক আন্দোলনের বিশিষ্ট অংশ, তবু বিশেষ করে দাবিদাওয়া আর রাজনীতির সম্পর্ক নিয়ে পাঠ রাজনীতি বিশারদেরা এখনো খুব একটা করে ওঠেন নাই। "[নাজমুল সুলতান]

নাজমুল সুলতানের নোক্তা আর ইতিহাসের আয়নায় দেখলে আমরা সহজেই অনুধাবণ করতে পারব যে শাপলায় মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তায় নয়া উত্থান হয়। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় হিদায়েতি হইতে শাপলাতে রাজনৈতিক কর্তাসত্তা হাজির হয়। নয়া সার্বভৌমত্বের ডাক দিয়ে অবদমিত কর্তা হতে রাজনৈতিক কর্তা আকারে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে৷

৫।দেজা ভ্যূ : শাপলার বাসনা ও হিদায়েতি

কোথায় যেন দেখেছিলাম, এখন আবার দেখছি- এমন অনুভূতিকে ফরাসি ভাষায় দেজা ভ্যূ বলে বোঝানো হয়৷ ইতিহাসের আয়নায় হিদায়েদিদের আন্দোলনের বাসনা শাপলার আন্দোলনের মাঝেও দৃশ্যমান হতে দেখা যায়৷ হিদায়েতিদের আন্দোলনের ভিত্তি ছিল আত্ম সত্তার। তদ্রূপ শাপলার আন্দোলনের ভিত্তিও আত্ম সত্তাকে কেন্দ্র করে৷ হিদায়েতিরা মুসলিম রাজনৈতিক কর্তা আকারে হাজির হয়ে খোদার জমিনে খোদার বাদশাহি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। উক্ত খোদার বাদশাহি প্রাক আধুনিক জামানার হাকিমিয়্যা যার ই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান রাষ্ট্রের সংবিধানে হাকিমিয়্যা যুক্ত হয় ঐতিহাসিক ন্যায্যতা নিশ্চিতে৷ হিদায়েতিদের এই খোদার জমিনে খোদার বাদশাহী তথা হাকিমিয়্যা শাপলার আন্দোলনেও বলা হয়। শাপলার ১৩ দফার পয়লা দফা ছিল সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করা। শাপলার ১৩ দফাতে সংবিধানের অভিভাবক আকারে খোদার সার্বভৌমত্বের প্রস্তাবনা দেয়। এই প্রস্তাবনা আমাদের হিদায়েতিদের খোদার বাদশাহী ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের সংবিধানের হাকিমিয়্যার কথা মনে করিয়ে দেয়৷ হিদায়েতি ও শাপলার বাসনাগত ঐক্য ফুটে ওঠে৷ এই প্রস্তাব সাংবিধানিকভাবে বি - ঔপনিবেশিকরন প্রকল্পের অংশ হিসাবে আমাদের মাঝে হাজির হয়। ঔপনিবেশিক সময়ে হিদায়েতি, পাকিস্তান আমলে সকল ধারার উলেমা সমাজ ও আধুনিক ইসলামপন্থী ও শাপলার প্রস্তাবনা যে সিলসিলাগত রাজনৈতিক কর্তাসত্তার বুনিয়াদে সাংবিধানিক বাসনা আমরা দেখি তা নয়া বাংলাদেশ গঠনের নিশানা।শাপলা আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্মান করবার প্রস্তাব করে৷

৬। ইতিহাসের আয়নাঘর : সংকোচন নাকি গুম?

বাংলাদেশের রাজনীতির খোঁজ যারা রাখেন তারা আয়নাঘর শব্দের সাথে পরিচিত। বাংলাদেশের ইতিহাসের বয়ান পর্যালোচনার নামে এই আয়নাঘর দেখা যায়৷ ইতিহাসের আয়নাঘরে আধিপত্যবাদী বয়ানের সমান্তারালে বয়ে চলা অবদমিত বয়ানকে গুম করে দেয়৷স্থানিক ও কালিক বাস্তবতায় গুম না করে সংকোচনের কুপ্রয়াস চালায় আধিপত্যবাদী মুলধারা সেক্যুলার সম্প্রদায়।মুলধারা উদারনৈতিক প্রগতিশীল ও মার্কসবাদীরা হিদায়েতি আন্দোলন ও শাপলার আন্দোলনের মর্মগত বুনিয়াদকে নয় সংকোচন করে নতুবা গুম করে৷ এই গুমের শুরু হয় মুসলিমদের শুধুই ধর্মীয় বর্গে ফেলে৷ হুমাইয়ারা ইক্তেদারের বরাত দিয়ে উসামা আল আযমি দেখাচ্ছেন যে, সেক্যুলারইজম আসবার পূর্বে মুসলিম পরিচয় ছিল রাজনৈতিক। কিন্তু সেক্যুলারইজম এসে একে শুধুই ধর্মীয় পরিচয়ে বর্গে সংকোচন ঘটায়৷

বাংলাদেশের উদারনৈতিক প্রগতিশীল ও মার্কসবাদীরা হিদায়েতি ও শাপলার আন্দোলনের চরিত্র ধরতে ধর তক্তা, মারো পেরেকের ন্যায় লফজ নিয়ে হাজির হয়। মুলধারার উদারনৈতিক প্রগতিশীলের কাছে হিদায়েতি ও শাপলা তা সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদ, জাতিবাদি, সুযোগ সন্ধানী ও ফ্যাসিবাদ, অপরদিকে মার্কসবাদীদের কাছে তা সামন্ততান্ত্রিক সমাজে জমিদারের বিরুদ্ধে কৃষকের শ্রেণী সংগ্রাম। হিদায়েতি ও শাপলায় অংশগ্রহনকারীরা উৎপাদনের সাপেক্ষে শুধুই অর্থনৈতিক বর্গ৷ ভারতীয় বাঙালি ইতিহাসবিদ গৌতম ভদ্র নিশ্চিত করছেন যে, সাম্প্রদায়িক বা শ্রেণী সংগ্রামের ছক দিয়ে হিদায়েতিদের আন্দোলন বুঝা যায় না। ইতিহাসের সিলসিলায় যে রাজনৈতিক কর্তা আকারে হিদায়েতিরা হাজির হয় তার সাথে ভদ্র একমত হন৷

"শাহ ওয়ালিউল্লাহ, আব্দুল আজিজ, সৈয়দ আহমেদ শহিদ আর শাহ ঈসমাইলের ঐতিহ্যে পুষ্ট হিদায়েতিদের আন্দোলন। গ্রাম সমাজে কৃষক আর জমিদারের সরাসরি মোকাবিলার চৈতন্যে তিতুর আন্দোলন অনুপ্রাণিত হয় নি৷ বরং গ্রামের চিরন্তন কায়েমি সম্পর্ক এবং নতুন গড়ে ওঠা হিদায়েতিদের ইচ্ছা আর ক্ষমতা এবং নতুন পরিচয়ের আকাঙ্ক্ষার দন্ধের মধ্যে তিতুর তথা হিদায়তিদের আন্দোলনের জন্ম হয়েছে৷ গ্রামসমাজের সব পরিচিত কুশীলবরাই এসেছে কিন্তু পালার সংলাপ আলাদা৷ তিতু তথা হিদায়েতিদের জমিদার আর কৃষকের সংগ্রামের সরাসরি ছকে ফেললে পালাটা জমবে না। হারিয়ে যাবে তিতুমীর তথা হিদায়েতিদের রাজনীতির জোর, মার খাবে তার দীনের তত্ত্ব।"[গৌতম ভদ্র]

ভদ্র থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে ইতিহাসের সিলসিলায় তরিকা-ই মহম্মদীয়া হইতে হিদায়েতিদের মাঝে রাজনৈতিক কর্তাসত্তা জারি ছিল৷ নয়া পরিচয়ের আকাঙক্ষায় হিদায়েতিদের জন্ম যা শ্রেণী সংগ্রামের মতো গদবাধা ছকে ফেলে বুঝা যায় না৷এভাবে বুঝতে চাওয়া বা বুঝতে বাধ্য করলে হিদায়েতিদের রাজনীতির জোর দূর্বল হয়ে যায়। অর্থাৎ হিদায়েতিদের রাজনৈতিক কর্তা হিসাবে ইনকার করা হয়৷ফলে ইতিহাসের সত্যের সংকোচন ঘটে৷

হিদায়েতিদের এই আন্দোলনের শক্তির উৎসের সুলুকসন্ধান করতে গিয়ে আধুনিক যুক্তিবাদি সেক্যুলার সমাজ ব্যর্থ। হান্টার থেকে কলভিনের মতো ঐতিহাসিকদের প্রতিবেদনে শুধুই ওয়াহাবি ও দারিদ্র্যতার কারনে তৈরি হওয়া আন্দোলন। কিন্তু এটা সত্য নয়৷ এ কথা সত্য যে হিদায়েতিরা সমাজের আতরফ শ্রেনীর ছিল। কিন্তু তাদের শক্তির উৎস নিয়ে এরকম প্রতিবেদন হিদায়েতিদের ইতিহাসের হক আদায় করতে পারে না। ব্যাহিক ভাবে আসাবিয়াত বা গোষ্ঠী সংহতিকে শক্তির উৎস মনে হলেও তা দিয়ে হিদায়েতিদের শক্তি নিক্তিতে মাপবার জো নেই৷ হিদায়েতিদের শক্তি তাদের ঈমানে৷ ভদ্র এখানে ঈমানের রাজনীতির কথা বলছেন যা মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তাকে নির্দেশ করে৷ হিদায়েতিদের মতোন একই ভাবে শাপলার আন্দোলন উৎপাদনের সাপেক্ষে অর্থনৈতিক বর্গ দিয়ে বুঝা যায় না৷ বাহ্যিকভাবে শাপলার জমায়েতের শক্তির উৎস আসাবিয়াত বা গোষ্ঠী সংহতি মনে হলেও তা দিয়ে বুঝা যায় না। হিদায়েতিদের মতোন শাপলার আন্দোলনের শক্তি ঈমানে৷ এই ঈমানের বুনিয়াদে শাপলা রাজনৈতিক কর্তা আকারে জানান দেয়৷হিদায়তিদের ন্যায় ঈমানের রাজনীতি প্রস্তাব করে। নয়া ক্ষমতার আকাঙক্ষার প্রকাশ ঘটে৷

"রক্ত, বংশ, পরিবার, সম্প্রদায় তাদের শক্তির উৎস মনে হলেও নিক্তিতে উক্ত হিদায়েতিদের শক্তি মাপবার জো নেই, তাই তাদের শক্তির উৎস খুজতে হবে তাদের ঈমানে এবং আত্ম চৈতন্যের ফলে তৈরি হওয়া তাদের নয়া ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষায়"[গৌতম ভদ্র]

হিদায়েতি ও শাপলার আন্দোলনকে জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের সংগ্রাম তথা শ্রেণী সংগ্রাম ছক দিয়ে দেখলে হিদায়তি ও শাপলার সত্তার প্রশ্ন, ক্ষমতার প্রশ্ন ও নয়া রাজনীতির প্রশ্নের সুহারা হয় না৷

"হিদায়েতিদের আন্দোলনের ভরকেন্দ্র উৎপাদন সম্পর্ককের মধ্যে নিহিত ছিল না। সামাজিক সম্পদ বন্টনের ও আহরনের রুপ নিয়েও বিরোধ বাধে নি। আবওয়াব মাত্রই নয়, দাড়ির ওপর বিশেষ আবওয়াব এবং মসজিদ পোড়ান সংঘর্ষের সরাসরি কারন। তাই হিদায়েতিদের আন্দোলনের জটিলতা নিহিত ছিল অন্যত্র, সত্তার প্রশ্নে, ক্ষমতার ক্ষেত্রে।"[গৌতম ভদ্র]

হিদায়েতি ও শাপলার বিরোধের কার্যকারন উৎপাদন সম্পর্ক না। প্রশ্নটা সত্তার৷ এই সত্তার প্রশ্নের সাপেক্ষে যে নয়া ঈমানের রাজনীতি, তাকে জাতিবাদি বা ইসলামো ফ্যাসিস্ট সহ নানা ট্যাগিং ও অপরায়ন করা হয়। এই অপরায়ন মুলত কর্তা আকারে স্কীকার করতে না চাওয়া। মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তাকে নাকচ করে দেওয়া। এটা শাসনতান্তিক ক্ষমতার লড়াই। মুলধারা সেক্যুলার সমাজ মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তাকে চটকদারি শব্দে খারিজ করে ঔপনিবেশিক ক্ষমতা কাঠামোর পুনঃউৎপাদন বহাল রাখে৷ বিদ্যমান ঔপনিবেশিক ক্ষমতার বিরুদ্ধে

ইতিহাসের সিলসিলায় যে মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তার উন্মেষ শাপলায় ঘটেছে তা গন মানুষের চৈতন্যেকে আমলে নিয়ে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবিধানিক সংস্কারের প্রস্তাবনা দেয়৷ ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় শাপলা ঈমানের রাজনীতির যে প্রস্তাবনা হাজির করে তা সাংবিধানিক ভাবে কার্যকর করে গন মানুষের ঈমানের নিশানকে বুলন্দ করা ই হবে শাপলা উত্তর নয়া বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের শুরুয়াত৷

দোহাই

১। আল কোরআন : সুরা আল ইমরান, আয়াত ২৬

২। আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম (রহঃ)। হাদিস নং: ৩১২৩

৩। ফতোয়ায়ে আযিযিয়া ফার্সি : ১৭ পৃ, ওলামায়ে হিনদ কা সানদার মাজি ২/৮০, ১৮৫৭ কা তারিখি রোজনামচা ১০ পৃ ; আংশিক বাংলা অনুবাদ মওলানা সাবের চৌধুরী ও মওলানা আব্দুর রহমান রাফি।

৪। ভদ্র, গৌতম। ঈমান ও নিশান। উনিশ শতকের বাংলার কৃষক চৈতন্যের এক অধ্যায় (১৮০০-১৮৫০) সুর্বণরেখা পাবলিশার্স, ১৯৯৩, কলকাতা৷

৫। আহমদ, আবুল মনসুর। আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর৷ ২০০২, আহমদ পাবলিশিং হাউজ, বাংলা বাজার, ঢাকা৷

৬। খান, ইসরাঈল। মুসলিম সম্পাদিত ও প্রকাশিত বাংলা সাহিত্য পত্রিকা (১৯৩১-৪৭) বাংলা একাডেমী, (২০০৫- ২০০৬), ঢাকা৷

৭। মিয়া, মুহম্মদ মজিরউদ্দিন। প্রবন্ধ বিচিত্রা। ১৯৯৫, বাংলা একাডেমী, ঢাকা৷

৮। কাউস, কায়। ইতিহাসের ছিন্নপত্র। গার্ডিয়ান প্রকাশনী, ২০২০

৯। রহমান, ফাহমিদ- উর সম্পাদিত। মুহাম্মদ আসাদ বাংলাদেশের অভিবাদন। হুদা, তরিকুল৷ প্রবন্ধ : তালাল আসাদের মুহাম্মদ আসাদ পর্যালোচনাঃ ইসলামি রাষ্ট্রে সার্বভৌমত; তুমি কার, কে তোমার?, ২০২১, মক্তব প্রকাশন, ঢাকা।

১০। রিবেরু, বিধান। শাহবাগ : রাজনীতি-ধর্ম-চেতনা।জাগতিক প্রকাশন, কাঁটাবন, ২০২২, ঢাকা।

১১। হুদা, তরিকুল। দেজা ভ্যু: বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মতাদর্শিক পরিগঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্ব- শিহান বিন ওমর সম্পাদিত, বাঙলানামা, অক্টোবর, ২০২১, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা৷

১২। নূরুল হুদা, মাহমুদ৷ আমার জীবন স্মৃতি। ১৯৯৯, বাংলা একাডেমী

১৩। আহমদ, ফররুখ। আব্দুল মান্নান সৈয়দ সম্পাদিত ফররুখ আহমর রচনাবলী, প্রথম খন্ড, বাংলা একাডেমী।

১৪। উসমানি, শাব্বির আহমেদ: খুতবাতুল ছাদারাত, পঠিত গড়ের মাঠ, কলকাতা৷

১৫। আজরফ, দেওয়ান মোহাম্মদ। তরিকা- ই মহম্মদীয়া, ইতিহাসযান প্রকাশিত, ৩০ ই মার্চ, ২০২৩

১৬। দোহা, তানজিন। ইন্ডিক থট, ইতিহাসযান প্রকাশিত ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২

১৭। হুদা, তরিকুল। বাংলাদেশের সংবিধান ও কামালবাদ। ইতিহাসযান প্রকাশিত, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৩ প্রকাশিত।

১৮। হক, ফাহমিদুল। নাগরিক সাংবাদিকতা ও শাহবাগ আন্দোলন, সর্বজন প্রকাশিত সর্বজন প্রকাশিত, ৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪

১৯। সুলতান, নাজমুল। দাবিদাওয়ার রাজনীতি - কিছু পর্যবেক্ষণ, সর্বজন প্রকাশিত, ৯ ই জুলাই, ২০১৩

২০। সেন, বিনায়ক। একটি ভিন্ন ধারার জন আন্দোলন, বিনায়ক সেন ব্লগ পোস্ট।

২১। সিংহ রায়, সূভাষ। রাজনীতিতে ধর্মঃ বিএনপি ও আওয়ামী লীগ, ডয়েচে ভেল বাংলা, জানতে চায় টক শো।

২২। Hegel, G.W.F. Phenomenology of Spirit, Translated by A. v Miller (1979), Oxford University Press

২৩। khan, Muin-ud- Din Ahmad. History of the Faraidi Movement in Bengal (1818-1906), Islamic Foundation Bangladesh, 1980.

২৪। Pearson, Harlan.Islamic Reform and Revival in Nineteenth – Century India, The Tariqah-i Muhammadiyah, Yoda Press,2008, Mumbai.

২৫। Sayyid, Salman,B . A Fundamental Fear: Eurocentrism and the emergence of Islamism. Zed Books Ltd, London, 1997.

২৬। Dhulipala, Venkat. Creating A New Medina : State power, Islam, and the Quest for Pakistan in Late Colonial North India, Cambridge University press, 2015.

২৭। Jaffar,Ghulam Muhammad. Tariqah-i-Muhammadiyah Movement and its Contribution to Creating a Separatist

Political Consciousness among the Muslims of India, 1818-1872.University of Exeter

২৮। Iqtidar, Humeira. Secularizing Islamists? Jama'at - e - Islami and Jama'at - ud - Da'wa in Urban Pakistan, South Asia Across the Disciplines.

২৯। Azmi, Usama Al. Locating Hakimiyya in Global History : The Concept of Sovereignty in Premodern Islam and It’s Reception after Mawdudi and Qutub.

৩০। Sayyid, B. Salman : The meaning of Pakistan, Re- Orient Blog, Critical Muslim Studies, 14 August, 2017

৩১। বিশেষ সহযোগিতায় তরিকুল হুদা